কালেমার অর্থ,

কোন ইলাহ মানি না আল্লাহ ছাড়া। অর্থ্যাৎ আল্লাহ ছাড়া কারো আনুগত্য মেনে কাজ করব না।

وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا نُوْحِيْۤ اِلَيْهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعْبُدُوْنِ

আর তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল আমি পাঠাইনি যার প্রতি আমি এই ওহী নাযিল করিনি যে, ‘আমি ছাড়া কোন ইলাহ/আনুগত্য মেনে কাজ পাওয়ার যোগ্য কেও নেই; সুতরাং তোমরা আমার ইবাদাত/ আনুগত্য মেনে কাজ কর।’

Al-Anbiya 21:25

পৃথিবীতে যত নবী ছিলেন, তাদের সকলের বার্তা ছিল এই একটাই— আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, /শুধু আল্লাহর আনুগত্য মেনে চলতে হবে।

এখন প্রশ্ন হলো আল্লাহ ছাড়া যদি আপনি কারো আনুগত্য না মানেন, তাহলে দুনিয়াতে চলবেন কিভাবে? এই প্রশ্নটা আরবদেরও ছিল -

اَجَعَلَ الْآلِهَةَ إِلٰهًا وَاحِدًا ۚ إِنَّ هٰذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ
সে কি সকল ইলাহকে এক ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? নিশ্চয় এ তো এক আশ্চর্য বিষয়!’
[আল কোরআন,
সাদ ৩৮:]

যে পরিস্থিতিতেই পড়েন না কেন, সেই বিষয়ের জন্য কুরআনের দিকনির্দেশনা রয়েছে। এই কারণেই কুরআনে অনেক নবীর জীবনী বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। যেহেতু আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো আনুগত্য করার সুযোগ নেই, সুতরাং কালেমা প্রতি কাজেই আপনাকে কুরআনের কাছে যেতে বাধ্য করবে যে, এই কাজের জন্য কুরআনে কী নির্দেশনা আছে, ঐ কাজের জন্য কী নির্দেশনা আছে।

আল্লাহ বলেন:

ٱلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিআমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে ইসলামকে পছন্দ করলাম।
আল-মায়িদাহ :

তাহলে বলা যায়, কখনো কুরআন সরাসরি করণীয় বলে দেয়, কখনো কাজের কৌশল বলে দেয়। আপনি যাই করুন, কুরআনের রেফারেন্সে কাজ করতে হবে। এই কারণে, কালেমাকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিদ্রোহী বাক্য। যা তার বাবা-মা, নেতা, সরকার সহ সকলের আনুগত্য অস্বীকার করে।

তেমনিভাবে আলেমদের আনুগত্য, জাল হাদিসের আনুগত্য, যেটার ব্যাপারে আল্লাহ কোনো প্রমাণ নাজিল করেননি, সেটার আনুগত্যও করা যাবে না।

اِتَّخَذُوْۤا اَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ اَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللّٰهِ وَالْمَسِيْحَ ابْنَ مَرْيَمَ ۚ وَمَاۤ اُمِرُوْۤا اِلَّا لِيَعْبُدُوْۤا اِلٰـهًا وَّاحِدًا ۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ؕ سُبْحٰنَهٗ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ

যে বিষয়ে আল্লাহ নিজেকে রব দাবি করেছে, সেবিষয়ে তারা আল্লাহর পরিবর্তে তাদের (ধর্মীয় আলেম) যাজক ও পাদ্রীদেরকে এবং মরিয়মের পুত্র ( তাদের নবী ঈসা) মসীহকে রব হিসেবে গ্রহণ করেছে।অথচ তাদেরকে একেবারেই  কোন নির্দেশ দেওয়া হয় নাই  যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে। (কেননা), আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ ( বা আনুগত্য মেনে কাজ পাওয়ার যোগ্য কেও) নাই। আল্লাহ সকল অযোগ্যতা থেকে মুক্ত, তা সত্বেও  তারা আল্লাহর সাথে অনেককে অংশীদার করে।
(আল-কুরআন, আত-তাওবাহ ৯:৩১)

এখন আপনি যদি মনে করেন আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ইলাহ মানবেন অথবা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে ইলাহ মানবেন, তাহলে আল্লাহ বলেন:

الَّذِيْ جَعَلَ مَعَ اللَّهِ إِلٰهًا آخَرَ فَأَلْقُوهُ فِي الْعَذَابِ الشَّدِيدِ
যে আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহ গ্রহণ করেছিল, তাকে কঠিন আযাবে নিক্ষেপ কর।
কাফ ৫০:২৬

আমরা অনেকেই মনে করি, আল্লাহ কুরআনে বাবা-মা, নেতা, হাসবেন্ডদের আনুগত্য করতে বলছেন। কিন্তু কুরআনের কোথাও আপনি তা খুঁজে পাবেন না।

সবাই উদাহরণ হিসেবে একটি আয়াত নিয়ে আসে, সেটি হল:

يٰٓاَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ
হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে আদেশকারী অভিভাবকদের।
আন-নিসা :৫৯

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোন আদেশ? অভিভাবকরা যদি মূর্তিপূজা করতে বলে, করবেন?

এটি হচ্ছে সেই আদেশ যা আল্লাহ ও তার রাসূলের আদেশের মধ্যে থাকে। যে আদেশ, কুরআনের বিপক্ষে যায় না।

এই আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা করে, আরব সরকারসহ অনেক নামধারী মুসলিম শাসক তাদের অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলা হারাম ঘোষণা করেছে। নেতা, শাসক, অভিভাবক কুরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার পরও যদি আমরা কথা না বলি, তাহলে মূসা নবীসহ সকল নবী সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন কেন?

মনে রাখবেন, কুরআনের প্রতিটি আয়াতের স্বপক্ষে রেফারেন্স আয়াত থাকে। যদি কোনো আয়াত অন্য আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক মনে হয়, বুঝতে হবে কোথাও আপনার বুঝার ভুল হচ্ছে।

আল্লাহ বলেন:

وَأَقِيمُوا الشَّهَادَةَ لِلَّهِ
আল্লাহর জন্য সাক্ষ্য (দুনিয়াতে) বাস্তবায়ন করো।
আত-তালাক ৬৫:

এখন প্রশ্ন হলো কোন সাক্ষ্যআপনি ন্যায়ের পথে  যে সাক্ষ্য দেন সকল সাক্ষ্যই এর অন্তর্ভুক্ত। আর, মুমিনের সবচেয়ে বড় সাক্ষ্যই হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহঅর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কারো আনুগত্য মানা যাবে না এই সাক্ষ্যটি যেটি জেনে বুঝে ঘোষণা দেয়ার মাধ্যমে ইমান আনতে হয় সুতরাং এ সাক্ষ্যকে দুনিয়ার জীবনে বাস্তবায়ন করা আপনার আমার সবার জন্য ফরজ।

এই সাক্ষ্য বাস্তবায়নের অর্থ হল- মুখে যে ঘোষনাটা দিচ্ছেন- আল্লাহ ছাড়া কারো আনুগত্য মানেন নাব্যক্তি জীবনেও কুরআনের দিকনির্দেশনার বাহিরে কোন কাজ করা যাবে না। সমাজেরাষ্ট্রে এমনকি সারাপৃথিবীর মানুষ যাতে শুধুমাএ এই কালেমার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকেতার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাইতে হবে।

আর এই কালেমার সাক্ষ্যটি দুনিয়াতে বাস্তবায়ন করতে পারলে সকল অশান্তির অবসান হবে।

সরকার যদি পুলিশকে আদেশ দেয়নিরাপরাধ মানুষকে গুলি করতেপুলিশ তা করবে নাযদি করে সরকার ইলাহ হয়ে যাবে। মানুষ যখন এই ভাবাদর্শ লালন করবেতখন কোন সরকার স্বৈরশাসক বা তাগুত হতে পারবে না।

আপনার স্ত্রী আপনার বাবা-মায়ের দেখাশোনা না করতে বললেআপনি তা শুনবেন না। শুনলে আপনার স্ত্রী আপনার ইলাহ হয়ে যাবে।

আপনি আপনার স্ত্রীর কাছে যৌতুক চাইলেসে আপনাকে মানবে না।

আপনার বাবা-মা আপনার কাছে অন্যায় আবদার করলেআপনি শুনবেন নাশুনলে বাবা-মা ইলাহ হয়ে যাবে।

কালেমা প্রতি কাজে আপনাকে কুরআনের কাছে যেতে বাধ্য করবে।

এখনকালেমায় যে সাক্ষী দেনসেটা কিভাবে কায়েম/বাস্তবায়ন করবেন?

সোজা উত্তরআল্লাহর জমীনে আল্লাহ ছাড়া মানুষ কারো আনুগত্য যাতে না করে তার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

রাসুলের জীবনী থেকেও আমরা জানি যেরাসুল শুধুমাত্র একটি জিনিসের দিকে মানুষকে দাওয়াত দিয়েছেন। মক্কার সকল নেতাকে উদ্দেশ্য করে রাসুল (স) বলেছেন:

فَقَالَ رَسُولُ اللهِنَعَمْ، كَلِمَةٌ وَاحِدَةٌ تُعْطُونِيَهَا تَمْلِكُونَ بِهَا الْعَرَبَ، وَتَدِينُ لَكُمْ بِهَا الْعَجَمُقَالَفَقَالَ أَبُو جَهْلٍنَعَمْ وَأَبِيكَ، وَعَشْرَ كَلِمَاتٍقَالَتَقُولُونَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَتَخْلَعُونَ مَا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِهِقَالَفَصَفَقُوا بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ قَالُواأَتُرِيدُ مُحَمَّدُ أَنْ تَجْعَلَ الْآلِهَةَ إِلَهًا وَاحِدًا؟ إِنَّ أَمْرَكَ لَعَجَبٌ.

"যদি তোমরা আমাকে একটি কথা মেনে নেওয়ার অঙ্গীকার দাও তাহলে তোমরা সেই একটি কথার মাধ্যমে গোটা আরব বিশ্বের মালিক বনে যাবে এবং অনারব বিশ্ব হয়তো তোমাদের দ্বীন/তোমরা যা মেনে চল তা গ্রহণ করবে অথবা তোমাদের কর দিয়ে থাকবে।" এ কথা শুনে আবু জাহল বললো, "অবশ্যই! তোমার পিতার কসমআরো দশটি কথা মানবো।" রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, "সেই একটি কথা হলো তোমরা বলবে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'/ আল্লাহ ছাড়া কারো আনুগত্য মেনে কাজ করব না। এক আল্লাহর ইবাদত/আনুগত্য মেনে কাজ করবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য যা কিছুর ইবাদত/আনুগত্য মেনে কাজ করা হয়সবকিছুকে ত্যাগ করবে।" এ কথা শুনামাত্র সকলেই হাতে তালি দিতে শুরু করলো আর বললো, "হে মুহাম্মাদতুমি কি আমাদের সকল ইলাহকে/যাদের আনুগত্য মেনে কাজ করা হয় এমন সকলকে এক আল্লাহতে কেন্দ্রীভূত করতে চাওতোমার ব্যাপারটি বড় আশ্চর্যজনক।" (সীরাত ইবনে হিশাম ১ম খণ্ডপৃঃ ৪৮০)

মক্কার লোকেরা এই যে কালিমার বিরোধিতা করেছিলএটা কিন্তু তারা জেনে বুঝেই করেছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল যে এই কালিমা গ্রহণ করার অর্থ হলো আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো আনুগত্য করা যাবে না। আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে কোনো নেতা-নেত্রীর আনুগত্য করা যাবে না। আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে মানবরচিত কোনো আইন-বিধান মানা যাবে না। ব্যক্তি জীবনেপারিবারিক জীবনেসামাজিক জীবনেরাষ্ট্রীয় জীবনেআন্তর্জাতিক জীবনেব্যাংকেআদালতেব্যবসা-বাণিজ্যে সকল ক্ষেত্রে এক আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়ন করতে হবে।

আবারযেমনি ভাবে ,

বর্তমানে ক্ষমাতাসীন বেশীরভাগ মানুষ নিজ নিজ জায়গায় ইলাহের আসনে বসে আছে-পরিবারেসমাজেঅফিসে,রাজনৈতিক দলেপার্লামেন্টেসরকারে,

 তেমনিভাবে ,

তৎকালীন আবু জাহেলআবু লাহাবআবু সুফিয়ানরাও ইলাহের আসনে বসে ছিল তারা জানতোএর বিরোধীতা না করলে তাদের ক্ষমতা হারাতে হবে কেননা কালেমা আল্লাহ ছাড়া সকলের আনুগত্য অস্বীকার করে এই কারনেসকল নবী রাসুল সহ যেই লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর দাওয়াত দিয়েছেতাদের সর্বপ্রথম বিরোধিতা করেছিল সেখানকার তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা যারা মুলত নিজেদেরকে ইলাহের আসনে বসিয়ে রেখেছিল । এই কারনেএসবকিছু বুঝে-শুনেই তারা বিরোধিতা করেছিল। পবিত্র কুরআনে তাদের বক্তব্যকে সংক্ষিপ্তভাবে নিম্নের আয়াতে বলা হয়েছে:

أَجَعَلَ الْآلِهَةَ إِلَهًا وَاحِدًا إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ

"তবে কি সে সকল ইলাহগুলোকে এক ইলাহতে কেন্দ্রীভূত করে ফেললএতো অত্যন্ত আজব কথা।" (সোয়াদ৩৮: ৫)

অমুসলিমদের সাথে মুসলিমদের মূল পার্থক্য হল—ইসলাম বলে এক আল্লাহরই আনুগত্য করতে হবেঅন্য ধর্ম বলে—আল্লাহর আনুগত্যও মানবো এবং অন্যদের কথাও মানবো। কিতাবুল ইমান (২য় সংস্করণ পৃষ্ঠা: ১১২ থেকে ১১৩) মুফতী মুহাম্মদ জসীমুদ্দীন

ইলাহ অর্থ আল্লাহ নয়আর এক আল্লাহতে বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস তখনো করতো এবং এখনো করে।

আবারআল্লাহ বলেন:

وَلَئِن سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لَيَقُولُنَّ اللّٰهُ

"যদি তুমি তাদেরকে (মুশরিকদের) জিজ্ঞেস করো: কে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং চাঁদ-সূর্যকে নিয়ন্ত্রণ করছেনতারা অবশ্যই বলবে: আল্লাহ!" (আনকাবুত ২৯:৬১)

আরো পাবেন এই নিম্নের আয়াতগুলোতে:

  • Az-Zukhruf ৪৩:৮৭
  • Az-Zumar ৩৯:৩৮
  • Surah Luqman ৩১:২৫
  • Surah Jumar ৩৯:৩৮

অমুসলিমরাও সর্বশক্তিমান এক আল্লাহতেই বিশ্বাস করে। তবে মুসলিমদের এক আল্লাহর বিশ্বাস এবং অমুসলিমদের এক আল্লাহর বিশ্বাস এক নয়কারণ ইসলাম বলে এক আল্লাহরই আনুগত্য করতে হবেঅন্য ধর্ম বলে—আল্লাহর আনুগত্যও মানবো এবং অন্যদের কথাও মানবো।

وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللّٰهِ إِلَّا وَهُمْ مُشْرِكُونَ

"তাদের অধিকাংশ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করেকিন্তু (ইবাদাতে) আল্লাহর সাথে অন্যদের অংশীদার করে অনেককে" (ইউসুফ ১২:১০৬)

আল্লাহকে বেশিরভাগ মানুষই বিশ্বাস করে। কিন্তু আল্লাহ একজন আছেন শুধুমাত্র এই বিশ্বাসের নাম ইমান নয়। ইমান হল—আল্লাহ ছাড়া কারো আনুগত্য মেনে কোন কাজ করা যাবে নাএই বিশ্বাস মজবুতভাবে ধারণ করা।

কেউ যদি কোনো ভালো কাজের কথা বলেতখনও কি তার আনুগত্য করা যাবে না?

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ

"সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না।" (আল-মানিদাহ ৫:২)

যে কোনো ভালো কাজে সহযোগিতাএটা আল্লাহর নির্দেশ। তাইআপনাকে চিন্তা করতে হবেযে ভালো কাজ করতে বলেছেআপনি তার আনুগত্য করতেছেন নাবরং আল্লাহ অনুমতি দিয়েছে বলেই তার কাজে সহযোগিতা করছেন।

আমরা রাসুলের দেখানো পথে আমাদের প্রতিদিনের কাজকর্ম কেন করিকারণ আল্লাহ অনুমতি দিয়েছে বলেই করিনা হয় করতাম না। তাই রাসুলের দেখানো পথে চলাএটাও আল্লাহর আনুগত্যেরই অংশ।

By Md. Ayub Ali October 10, 2024

"রব" শব্দটি মূলত যেকোনো দাতা বা প্রদানকারী অর্থে আরবদের মধ্যে ব্যবহৃত হতো। যে কেউ কিছু দান করে, সিদ্ধান্ত দেয়, অর্থ দেয়, খাবার দেয়, এমনকি লালন পালন করে—তাকে "রব" বলা হতো। লালন পালন করতে হলে তো কিছু দিতে হয়—যেমন: পানি, বাসস্থান, বস্ত্র, চিকিৎসা ইত্যাদি। আরবরা এই কারণেই এসব ক্ষেত্রে "রব" শব্দটি ব্যবহার করত।
তবে, যখন "আল-রব" শব্দটি ব্যবহার করা হয়, তখন সেটা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য। আল্লাহ হচ্ছেন বিশ্বজগতের একমাত্র রব, এবং আল্লাহ ছাড়া কেউ এই দাবি করতে পারে না—পাগল ছাড়া।

আজকে আমরা "রব" শব্দের প্রকৃত অর্থ ভুলে যাওয়ার ফলে, আধুনিক যুগের "ফেরাউন"দের চিহ্নিত করতে পারছি না।
আসুন দেখি এই ব্যাপারে আল-কুরআন কি বলে—

"وَقُلْ رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيٰنِيْ صَغِيْرًا"
হে প্রভু! আমার পিতামাতার প্রতি দয়া করো, যেমন তারা আমাকে ছোট থাকতে (দয়া দিয়ে) লালনপালন করেছেন।’
(
আল-কুরআন, আল-ইসরা ১৭:২৪)
এখানে বাবা-মা বুঝাতে "রব" শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে।

আরেকটি উদাহরণ পাওয়া যায়,  ইউসুফ নবী যখন জেলখানায় ছিলেন তিনি তখন বাদশাহ আজিজকে তার সংগীদের রব বলে সম্বোধন করেছেন -

 

"يٰصَاحِبَيِ السِّجْنِ اَمَّاۤ اَحَدُكُمَا فَيَسْقِيْ رَبَّهٗ خَمْرًا"
হে আমার কারাসঙ্গীদ্বয়, তোমাদের একজন তার রবকে মদপান করাবে।’
(
আল-কুরআন, ইউসুফ ১২:৪১)

আবার নিম্নের আয়াতে ইউসুফ নবী তার আশ্রয়দাতাকে "রব" হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা তখনকার আরবদের ব্যবহারিক অর্থে এসেছে।

 

وَرَاوَدَتْهُ الَّتِيْ هُوَ فِيْ بَيْتِهَا عَنْ نَّفْسِهٖ وَغَلَّقَتِ الْاَبْوَابَ وَقَالَتْ هَيْتَ لَكَ ؕ قَالَ مَعَاذَ اللّٰهِ اِنَّهٗ رَبِّيْۤ اَحْسَنَ مَثْوَايَ ؕ اِنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الظّٰلِمُوْنَ

আর যে মহিলার ঘরে ইউসুফ ছিলেন, সেই (জুলেখা) তাকে কুপ্ররোচনায় প্রলুব্ধ করল। দরজাগুলো বন্ধ করে দিয়ে বলল, "এসো!" কিন্তু ইউসুফ বললেন, "আল্লাহর আশ্রয় চাই! নিশ্চয় তিনি (তোমার স্বামী আজিজ) আমার রব; তিনি আমার থাকার সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন। নিশ্চয়ই জালিমরা কখনো সফল হয় না।"
(
আল-কুরআন, ইউসুফ ১২:২৩)

এখানে ইউসুফ নবী তার আশ্রয়দাতা আজিজকে "রব" হিসেবে উল্লেখ করছেন, যা তৎকালীন আরবদের দৈনন্দিন ব্যবহারের একটি উদাহরণ।

আবার, আল্লাহ নিজেই আজিজকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন জেলখানা থেকে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তির "রব" হিসাবে—

وَقَالَ لِلَّذِيْ ظَنَّ اَنَّهٗ نَاجٍ مِّنْهُمَا اذْكُرْنِيْ عِنْدَ رَبِّكَ ۫  فَاَنْسٰهُ الشَّيْطٰنُ ذِكْرَ رَبِّهٖ فَلَبِثَ فِي السِّجْنِ بِضْعَ سِنِيْنَ

আর তাদের দু'জনের মধ্যে যে মুক্তি পাবে বলে সে ধারণা করেছিল, তাকে বলল, “তোমার রবের কাছে আমার কথা উল্লেখ করবে। কিন্তু শয়তান তাকে তার "রব"-এর কাছে ইউসুফের কথাটি উল্লেখ করার বিষয়টি ভুলিয়ে দেয়, ফলে ইউসুফ আরও কয়েক বছর জেলে অবস্থান করেন।”’
(
আল-কুরআন, ইউসুফ ১২:৪২)

এই আয়াতগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে তৎকালীন আরবরা শাসকদেরও "রব" বলে ডাকত।

এত কিছু বলার মূল কারণ হলো আজকের যুগের "ফিরাউন"দের চেনা। যেমন ফিরাউন নিজেকে শাসক অর্থে "রব" দাবি করেছিল। প্রথমে সে বলেছে—

"وَنَادٰي فِرْعَوْنُ فِيْ قَوْمِهٖ قَالَ يٰقَوْمِ اَلَيْسَ لِيْ مُلْكُ مِصْرَ وَهٰذِهِ الْاَنْهٰرُ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِيْ ۚ اَفَلَا تُبْصِرُوْنَ"
আর ফির‘আউন তার কওমের মধ্যে ঘোষণা দিয়ে বলল, “হে আমার কওম! মিসরের রাজত্ব কি আমার নয়? আর এই নদীগুলো কি আমার নিয়ন্ত্রণে প্রবাহিত হচ্ছে না? তোমরা কি দেখছ না?”’
(
আল-কুরআন, আয-যুখরুফ ৪৩:৫১)

প্রথমে, ফিরাউন নিজেকে মিশরের শাসক হিসেবে ঘোষণা করে। দ্বিতীয়ত, এখন যেমন টেকনোলজি ব্যবহার করে নদী ও পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হতো, ফিরাউনও তার সময়কার টেকনোলজির ক্ষমতা ব্যবহার করত।

বর্তমান সরকারগুলোর মতোই ফিরাউনও তার সময়কার পানি, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করত। বর্তমান শাসকরা যেমন যখন যেখানে চায় এইগুলো  সরবরাহ করতে পারে, আবার বন্ধও করতে পারে।

এটা থেকে স্পষ্ট হয় যে মানুষ বিভিন্নজনকে "রব" বানায়।

কিন্তু যেখানে আল্লাহই একমাত্র রব, সেখানে তাঁর স্থানে অন্য কাউকে "রব" হিসেবে মর্যাদা দেওয়া যাবে না। আল্লাহ বলেন—

 

اِتَّخَذُوْۤا اَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ اَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللّٰهِ وَالْمَسِيْحَ ابْنَ مَرْيَمَ ۚ وَمَاۤ اُمِرُوْۤا اِلَّا لِيَعْبُدُوْۤا اِلٰـهًا وَّاحِدًا ۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ؕ سُبْحٰنَهٗ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ

যে বিষয়ে আল্লাহ নিজেকে রব দাবি করেছে, সেবিষয়ে তারা আল্লাহর পরিবর্তে তাদের (ধর্মীয় আলেম) যাজক ও পাদ্রীদেরকে এবং মরিয়মের পুত্র ( তাদের নবী ঈসা) মসীহকে রব হিসেবে গ্রহণ করেছে।অথচ তাদেরকে একেবারেই  কোন নির্দেশ দেওয়া হয় নাই  যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে। (কেননা), আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ ( বা আনুগত্য মেনে কাজ পাওয়ার যোগ্য কেও) নাই। আল্লাহ সকল অযোগ্যতা থেকে মুক্ত, তা সত্বেও  তারা আল্লাহর সাথে অনেককে অংশীদার করে।
(আল-কুরআন, আত-তাওবাহ ৯:৩১)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় অনেকে নিম্নের হাদিসটি উল্লেখ করেন—

তিরমিযীর বর্ণনা অনুযায়ী, দানবীর হাতেম তাই-এর পুত্র হযরত আদী ইবনে হাতেম নবী (সা.) এর কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি তখন খ্রিস্টান ছিলেন এবং নবী (সা.)-কে কিছু প্রশ্ন করেন। এর মধ্যে একটি ছিল, কুরআনের এই আয়াতে উলামা ও দরবেশদেরকে রব বানানোর অর্থ কী। নবী (সা.) উত্তরে বলেন, “তারা যেগুলোকে হারাম বলত, তোমরা সেগুলোকে হারাম বলে মেনে নিতে এবং যেগুলোকে হালাল বলত, সেগুলোকে হালাল বলে মেনে নিতে। একথা কি সত্য নয়?” হযরত আদী বলেন, “হ্যাঁ, এটি ঠিক, আমরা এভাবেই করতাম।” তখন রসূলুল্লাহ বলেন, “এটিই হলো তাদেরকে রব বানিয়ে নেওয়া।”

এ থেকে স্পষ্ট হয়, আল্লাহর নির্দেশনা বা কিতাবের সনদ ছাড়া যারা মানবজীবনের জন্য হালাল ও হারাম নির্ধারণ করে, তারা নিজেদের ধারণা অনুযায়ী আল্লাহর সার্বভৌমত্বের মর্যাদায় বসে যায়। আর যারা তাদের এই ক্ষমতা মেনে নেয়, তারা কার্যত তাদেরকে আল্লাহর স্হলে তাদের "রব" বানিয়ে নেয়।

উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, ধর্মীয় পণ্ডিতরাও "রব" হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে তারা ইসা (আ.)-কে রব বানাল?

আমরা জানি, নবীরা আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া আল্লাহ্র নাম ব্যবহার করে কিছু করেননি। কিন্তু তাদের মৃত্যুর পর মানুষ তাদের নামে মিথ্যা গল্প বা জাল হাদিস তৈরি করেছে, যা তারা কখনো বলেননি বা করেননি।

যেমন: ইসা (আ.) কখনো নিজেকে আল্লাহ দাবি করেননি। খ্রিস্টানরা এখন যেসব ইবাদত করে, তার অনেকগুলোই ইসা (আ.) নিজে করেননি বা করতে বলেননি। কিন্তু তার অনুসারীরা তার নামে জাল ঘটনা বা প্রমাণ দাঁড় করিয়ে তাকে "রব" হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে। অথচ ইঞ্জিলে এর কোনো প্রমাণ নেই।

আরো সহজ করে বলি: ধরুন, আপনি একটি কথা বলেননি, কিন্তু কেউ সেটা আপনার নামে চালিয়ে দিয়েছে। একইভাবে, নবী (সা.) কোনো কিছু বলেননি বা করেননি, কিন্তু তার নামে মিথ্যা দাবি করা হচ্ছে। আপনি যদি এই মিথ্যাকে গ্রহণ করেন, তাহলে এই আয়াত আপনার জন্যও প্রযোজ্য, কেননা আপনি নবী (সা.)-কে মিথ্যা "রব" বানিয়ে নিচ্ছেন।

সিদ্ধান্ত আসবে কোরআন থেকে, কিন্তু বর্তমানে কিছু সিদ্ধান্ত আসে আলেমদের ফতোয়া, পার্লামেন্ট, অথবা জাল হাদিসের ভিত্তিতে। এটি আমাদেরকে সতর্ক হতে শেখায়।

আল্লাহ বলেন—
"
اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِ"
হুকুম (সিদ্ধান্ত) একমাত্র আল্লাহরই।’
(
আল-কুরআন, ইউসুফ ১২:৬৭)

অতএব, যেখানে আল্লাহর হুকুম বিদ্যমান, সেখানে আপনি যদি অন্য কারো হুকুম মানেন, তাহলে আল্লাহর পরিবর্তে আপনি তাকে "রব" হিসেবে গ্রহণ করলেন।

তাহলে, "ইলাহ" এবং "রব" এর মধ্যে পার্থক্য কী?

"রব" এবং "ইলাহ" শব্দের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে:

"রব" শব্দটি দাতা বা প্রদানকারী অর্থে ব্যবহৃত হয়, যেমনঃ আদেশ দাতা, সিদ্ধান্ত দাতা, খাবার দাতা ইত্যাদি। ধরুন দুইজন ব্যক্তি, একজনের নাম- রফিক, আরেকজনের নাম -সায়েম। যখন রফিক সায়েমকে কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক কোন অন্যায় কাজের নির্দেশ দেয়, তখন রফিক রবের কাজ করল। কিন্তু এই কাজটির ব্যপারে সায়েম আনুগত্য করবে কি করবে না এই ব্যপার সায়েম স্বাধীন।  সায়েম যদি আনুগত্য না মানে,তাহলে রফিক তার রব না। আবার ধরেন, সায়েম মুখে মুখে মন থেকে আনুগত্য মেনে নিল, কিন্তু কাজে প্রকাশ করল না সেখেএেও সায়েম রফিককে রবের মর্যাদা দিল, কিন্তু যেহেতু কাজে প্রকাশ করে নাই তাই রফিককে সায়েম ইলাহের মর্যাদা দিল না।

আর "ইলাহ" হলেন গ্রহীতা অথবা যার আনুগত্য করা হয় , তাকে ইলাহ বলে।  আর, যখন রফিক সায়েমের কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক কোন অন্যায় আদেশ মেনে নিয়ে  তা কাজে বাস্তবায়ন করল, তখন বলা হয়, রফিক সায়েমের আনুগত্য করল অর্থাৎ তাকে ইলাহ হিসেবে মেনে নিল এবং সায়েম আনুগত্য গ্রহণ করল।যেহেতু, সায়েম আনুগত্য  গ্রহিতা, সে অর্থে সে ইলাহ।

অনেকে মনে করে জড় বস্তুও ইলাহ হতে পারে,কিন্তু সে কিভাবে আনুগত্য গ্রহণ করবে? আর যে আনুগত্য নিতে পারে না, সে কখনো ইলাহ হতে পারে না এই কারনে আল্লাহ কুরআনে মানুষ যে নিজেকে ইলাহ বানিয়েছে সে সম্পর্কে বললেও জড়বস্তুর ক্ষেত্রে সেটি বিদ্রুপাত্মক অর্থে বলেছে। তার মানে দাঁড়ায়, যে আনুগত্য নিতে পারে না তাকেও মানুষ ইলাহ মনে করে।

 যেমন, আল্লাহ আপনাকে রোজা রাখতে বলেছেন, কিন্তু আপনি রোজা রাখলেন না। এখানে আল্লাহ রব হিসেবে আপনাকে আদেশ দিয়েছেন, কিন্তু আপনি তাঁর আদেশ মানেননি। ফলে, আদেশ দাতা রব আল্লাহর আনুগত্য গ্রহণ করা হয়নি।

এখন ধরুন, আপনার পিতা আপনাকে বলেন, "অমুকের জমি অন্যায়ভাবে দখল করে নাও।" আপনি যদি তার আদেশ মেনে কাজ করেন, তাহলে আদেশ দেওয়ার মাধ্যমে আপনার পিতা "রব"-এর ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু যতক্ষণ আপনি তার আদেশ পালন না করেন, তিনি আপনার "ইলাহ" হবেন না। যখন আপনি তার কথামতো কাজ করবেন, তখন তিনি আপনার "ইলাহ" হয়ে যাবেন, কারণ আপনি তাকে আনুগত্য দিয়েছেন এবং তিনি সেই আনুগত্য গ্রহণ করেছেন।

দুনিয়াতে অনেকেই—বাবা-মা, ভাই-বোন, শাসক, বন্ধু, বস—রবের আসনে বসে আদেশ দিতে পারে। কিন্তু মুমিনরা কারোরই ইলাহ হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া। যদি তাদের আদেশ আল্লাহর আদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, সেটি আল্লাহর আদেশই গণ্য হবে।

এ কারণেই আল্লাহ বলেননি—
"
লা রব্বা ইল্লাল্লাহ"- আল্লাহ ছাড়া কোন রব মানি না
কেননা অনেকেই আদেশদাতা অর্থে "রব" হিসেবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। কিন্তু,আল্লাহ ছাড়া কারো আনুগত্য মেনে কাজ করা যাবে না।

আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে আমরা রবের আসনে বসাই:

১. পার্লামেন্ট সদস্য:
আইন প্রণয়নকারী পার্লামেন্ট সদস্যরা দেশের বিভিন্ন আইন ও বিধি প্রণয়ন করেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি পার্লামেন্ট এমন একটি আইন পাস করে যা ইসলামের নীতির বিপরীত, তখন যারা সেই আইন মেনে চলে, তারা আদর্শভাবে আল্লাহর আদেশের পরিবর্তে পার্লামেন্টের সিদ্ধান্তকে উচ্চমার্যাদা দেয়।

২. নেতা বা রাজনৈতিক নেতা:
রাজনৈতিক নেতারা দেশের নীতিমালা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেন যা ইসলামের বিধির বিরুদ্ধে, তার অনুসারীরা সেই সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেয়।

৩. এলাকার চেয়ারম্যান ও মেম্বার:
স্থানীয় প্রশাসনের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা এলাকার বিভিন্ন সমস্যা সমাধান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন চেয়ারম্যান স্থানীয়ভাবে কিছু অযাচিত আদেশ দেন, তার সিদ্ধান্তের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে কেউ কেউ তাকে "রব" হিসেবে মেনে নেয়।

৪. প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) বা ব্যবসার মালিক:
একটি কোম্পানির CEO বা ব্যবসার মালিক সিদ্ধান্ত নেন যে কর্মচারীরা মেনে চলতে বাধ্য। উদাহরণস্বরূপ, একটি ব্যবসার মালিক যদি এমন কিছু আদেশ দেন যা ইসলামের বিধির বিরুদ্ধে, কর্মচারীরা সেই আদেশ মেনে নিয়ে তাকে "রব" হিসেবে মেনে নেয়।

৫. শিক্ষক:
শিক্ষকেরা শিক্ষার ক্ষেত্রের নিয়ম এবং নীতি নির্ধারণ করেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন শিক্ষক ধর্মীয় বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত দেন যা ইসলামের বিধির বিরুদ্ধে, ছাত্ররা সেই সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে তাকে "রব" হিসেবে গণ্য করতে পারে।

নবী এবং আলেমদেরকে রব বানানো:

নবীরা কখনও নিজেদেরকে "রব" হিসাবে দাবি করেননি বা তাদের অনুসারীদের এমন নির্দেশ দেননি। কিন্তু কিছু মানুষের মিথ্যা প্রচারণা এবং ভুল বুঝাবুঝির কারণে, তারা নিজেদেরকে নবীর নাম ব্যবহার করে ধর্মীয় সিদ্ধান্ত ও আদেশের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ:

১. নবী ঈসা (আঃ):
খ্রিস্টানদের কিছু মতবাদ অনুযায়ী, ঈসা (আঃ) কে আল্লাহর অংশ বা প্রভু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও ঈসা (আঃ) কখনও নিজেকে রব দাবী করেননি, কিছু মানুষ মিথ্যা হাদিস এবং গুজবের মাধ্যমে তাকে "রব" হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কুরআন অনুযায়ী, ঈসা (আঃ) নিজেকে রব দাবি করেননি:
আল্লাহ বলেন, ‘ঈসা পুত্র মেরিয়াম, তুমি কি মানুষের কাছে বলেছিলে, ‘আমাকে এবং আমার মায়ের কে আল্লাহর পাশাপাশি দুইজন প্রভু (রব) হিসেবে গ্রহণ করো?’”
(
সূরা আল-মায়িদাহ ৫:১১৬)

২. আলেম বা ধর্মীয় পণ্ডিত:
কিছু ধর্মীয় পণ্ডিতরা ধর্মীয় বিধি-নিষেধ নির্ধারণে এমন মতবাদ প্রকাশ করেছেন যা কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো আলেম এমন কিছু সিদ্ধান্ত দেন যা কুরআনের নির্দেশনার বিপরীতে হয় এবং সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া হয়, তাহলে তা "রব" বানানোর মতো হতে পারে। কুরআন বলে:

اِتَّخَذُوْۤا اَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ اَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللّٰهِ وَالْمَسِيْحَ ابْنَ مَرْيَمَ ۚ وَمَاۤ اُمِرُوْۤا اِلَّا لِيَعْبُدُوْۤا اِلٰـهًا وَّاحِدًا ۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ؕ سُبْحٰنَهٗ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ

যে বিষয়ে আল্লাহ নিজেকে রব দাবি করেছে, সেবিষয়ে তারা আল্লাহর পরিবর্তে তাদের (ধর্মীয় আলেম) যাজক ও পাদ্রীদেরকে এবং মরিয়মের পুত্র ( তাদের নবী ঈসা) মসীহকে রব হিসেবে গ্রহণ করেছে।অথচ তাদেরকে একেবারেই  কোন নির্দেশ দেওয়া হয় নাই  যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে। (কেননা), আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ ( বা আনুগত্য মেনে কাজ পাওয়ার যোগ্য কেও) নাই। আল্লাহ সকল অযোগ্যতা থেকে মুক্ত, তা সত্বেও  তারা আল্লাহর সাথে অনেককে অংশীদার করে।
(আল-কুরআন, আত-তাওবাহ ৯:৩১)

নবী বা আলেমদের আদেশ এবং নির্দেশনার ক্ষেত্রে কুরআনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু মিথ্যা প্রচারণা বা ভুল ব্যাখ্যা তাদেরকে "রব" হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। তবে, মুমিনদের জন্য কুরআনের নির্দেশনা একমাত্র সত্যিকারের পথনির্দেশক এবং আল্লাহই একমাত্র আসল "রব" যিনি সঠিক নির্দেশনা প্রদান করেন। অতএব, কোনো প্রকার মিথ্যা বা ভুল ব্যাখ্যার ভিত্তিতে আল্লাহর আদেশের পরিবর্তে অন্য কারো আদেশ মেনে নেওয়া উচিত নয়।

আল্লাহ বলেন:

إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ 

"নিশ্চয়ই আমরা কুরআন নাজিল করেছি, এবং আমরাই এর সংরক্ষক।" 

— (সূরা আল-হিজর, আয়াত ৯)

এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি কুরআনের সংরক্ষণ দায়িত্ব স্বয়ং গ্রহণ করেছেন, এবং কিয়ামত পর্যন্ত কুরআন অপরিবর্তিত থাকবে।

কিন্ত,

আল্লাহ সরাসরি হাদিস সংরক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এমন কোনো আয়াত কুরআনে উল্লেখ নেই। তবে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ রাসূলুল্লাহ -এর অনুসরণ ও তাঁর কথামালার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। উদাহরণস্বরূপ, আল্লাহ বলেন:

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا
অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (এর প্র্যাকটিক্যাল জীবন যেমন যুদ্ধ, রাজনীতি, সমাজনীতি সহ সৃ্পূর্ন জীবনের) মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ, তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।

— (সূরা আল-আহযাব, আয়াত ২১)

এছাড়া, হাদিস সংরক্ষণ ও তা প্রামাণিকভাবে সংরক্ষণ ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই মুসলিম উম্মাহর সাহাবী ও তাবেঈনের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে হয়ে এসেছে। আল্লাহর ইচ্ছায় এবং মুসলিম উম্মাহর প্রচেষ্টায় হাদিস সংগ্রহ, যাচাই-বাছাই, এবং সংরক্ষণ একটি সুসংগঠিত প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে।

তা সত্ত্বেও, কিছু জাল হাদিস সমাজে বিদ্যমান।

আর, কালেমার মাধ্যমে যখন আপনি ঘোষনা দিচ্ছেন, আল্লাহ ছাড়া কারো আনুগত্য আপনি মানেন না, তাই বলা যায়, কালেমা হাদিসকে কুরআনের কষ্টিপাথরে যাচাইয়ে বাধ্য করে। নিঃসন্দেহে রাসূলের হাদিস কুরানের সাথে সাংঘর্ষিক হবে না,কিন্তু জাল হাদিস যেটি কুরানের সাথে সাংঘর্ষিক তা বর্জনীয়।

By Md. Ayub Ali October 10, 2024

খুশি মনে আনুগত্য মেনে যে কাজ হয় সেই কাজকেই ইবাদত বলে। ইসলামি পরিভাষায়, আল্লাহ্র আনুগত্য মেনে যে কাজ হয়, সেটাকে আল্লাহ্র ইবাদত বলে

চতুর্থ হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ ভাষাবিদ ও অভিধান প্রণেতা হুসাইন আহমদ ইবনু ফারিস (মৃত্যু ৩৯৫ হিজরী) তার বিখ্যাত গ্রন্থ “মাকায়িস আল-লুগাহ” তে এই শব্দের সংজ্ঞাতে লিখেনঃ

 (عَبَدَ) الْعَيْنُ وَالْبَاءُ وَالدَّالُ أَصْلَانِ صَحِيحَانِ، كَأَنَّهُمَا مُتَضَادَّانِ، وَ [الْأَوَّلُ] مِنْ ذَيْنِكَ الْأَصْلَيْنِ يَدُلُّ عَلَى لِينٍ وَذُلٍّ، وَالْآخَرُ عَلَى شِدَّةٍ وَغِلَظٍ। 

আবদ (عبَدَ) শব্দের অক্ষর 'ع' (আইন), 'ب' (বা), এবং 'د' (দাল) দিয়ে গঠিত শব্দটির মধ্যে দুটি মূল একসাথে আছে, কিন্তু মূল দুটি পরস্পর বীপরিত মনে হলেও এই দুটি এক সাথে মিলে ইবাদতের অর্থ তৈরি করেপ্রথম মূল শব্দটি নরম ও নম্রতার ধারণা প্রকাশ করে, আর দ্বিতীয়টি কঠোরতা নির্দেশ করে।

তাই বলা হয়, প্রথম মূলটি স্বেচ্ছায় আনুগত্য মেনে নেওয়ার ধারণা বোঝায়, আর দ্বিতীয়টি কঠোর কাজ বোঝায় আর স্বেচ্ছায় আনুগত্য অনুযায়ী যে কাজটি কঠোরভাবে পালন করা হয়, সে কাজকে ইবাদত বলে। 

দ্বিতীয় হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ ভাষাবিদ, পৃথিবী  সর্বপ্রথম অভিধান প্রণেতা ও এরাবিক মাখরাজের জনক আল খলিল (রহিমাহুল্লাহ) (১০০ -১৭০ হি) তার বিখ্যাত অভিধান কিতাব আল আইনে বলেন -"আল-আবদ" (العبد) হলো মানুষ, পৃথিবীতে সে হতে পারে স্বাধীন বা কারো অধীন (কিন্তু সে কারো না কারো দাস)। 

আল-আবদ" (العبد) দুই রকমের হতে পারে: 

 সে আল্লাহ ছাড়া কারো আনুগত্য মেনে কাজ করে না। 

অথবা

তার মন যখন যার আনুগত্যের ব্যাপারে সায় দেয়, সে তার আনুগত্য  মেনে নিয়ে কাজ করে। 

তিনি আরও বলেন-সাধারণ জনগণ আবাদুল্লাহ (عباد الله) এবং আল-আবদ (العبيد) এর মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করেছে। 

عباد الله (আবাদুল্লাহ): যারা স্বেচ্ছায় শুধুমাত্র আল্লাহর আনুগত্য করে কাজ করে। [এ বিষয়ে আয়াত

পাবেন - আল-ইনসান ৭৬:৬, সুরা ফুরকান ২৫:৬৩] 

আর, العبيد (আল-আবদ): যারা স্বেচ্ছায় কখনো আল্লাহ আবার কখনো অন্য কারো আনুগত্য মেনে কাজ করে। হতে পারে মন, হতে পারে সরকার, বাবা-মা, ধর্মীয় আলেম, তাগুত, নেতা অথবা বন্ধুর। [রেফারেন্স আয়াত পাবেন

সুরা ইয়াসিন ৩৬:৬০, সুরা ফুরকান ২৫:৪৩, সুরা আস-সাফফাত ৩৭:২২-২৩] 

পৃথিবীতে এই দুটি শ্রেণির বাইরে কোনো মানুষ নেই; প্রতিটি মানুষ এই দুই শ্রেণির যে কোনো একটিতে অন্তর্ভুক্ত হবে। 

তাহলে, ইবাদত কাকে বলে?

 মানুষ ও জীন আনুগত্য মেনে যে কাজটা করে সে কাজকে ইবাদত বলে।

মানুষ যদি শুধুমাত্র আল্লাহর আনুগত্য মেনে কাজ করে, সে আল্লাহর ইবাদত করল অর্থাৎ সে আব্দুল্লাহ।

আর মানুষ বা জীন   যদি  মন সহ অন্য কারো আনুগত্য মেনে কাজ করে, সে অন্য কারো ইবাদত করল অর্থাৎ সে অন্য কারো আবদ।

উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট, ইবাদত এর  মূল ধারণাটি দুটি অংশে বিভক্ত: প্রথমটি হলো আনুগত্য এবং তারপরেরটি হলো কাজ। অর্থাৎ, ইবাদত বলতে এমন কাজকে বুঝায় - যা সম্পাদিত হয় স্বেচ্ছায়  কারো বা কোন কিছুর আনুগত্য করে।

এখন, যদি আপনি আনুগত্য মানেন না কিন্তু বাধ্য হয়ে কোনো কাজ করেন, তাহলে সেটি ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে না। আর যদি আপনি শুধুমাত্র আনুগত্য মেনে নেন কিন্তু তার অনুরূপ কাজ করেন না, তাও ইবাদত হবে না। সুতরাং, ইবাদত বলতে যা বুঝানো হয় তা হলো:

ইবাদত = আনুগত্য মেনে নেয়া + সে অনুযায়ী কাজ করা।

এই সংজ্ঞা অনুযায়ী, প্রকৃত ইবাদত তখনই হয় যখন কেউ আন্তরিকভাবে আনুগত্য স্বীকার করে এবং তার পর সেই আনুগত্য অনুযায়ী কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

আল্লাহ বলেন-

اَلَمْ اَعْهَدْ اِلَيْكُمْ يٰبَنِيْۤ اٰدَمَ اَنْ لَّا تَعْبُدُوا الشَّيْطٰنَ   اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ ۙ

"হে বনী আদম, আমি কি তোমাদেরকে এ মর্মে নির্দেশ দিইনি যে, ‘তোমরা শয়তানের ইবাদত করো না। নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’?" (সূরা ইয়াসিন ৩৬:৬০)

আমরা আল্লাহর ইবাদতের কথা জানি। এখন প্রশ্ন হলো, শয়তানের ইবাদত কেমন করে করা হয়? আল্লাহ রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু যদি কোনো ব্যক্তি শয়তানের প্ররোচনায় রোজা না রাখেন, তাহলে তিনি শয়তানের ইবাদত করছেন।

আনুগত্য যার, ইবাদত হয়ে যায় তার জন্য যদি কেউ শয়তানের কথা শুনে লোক দেখানোর জন্য নামাজ পড়ে, তাহলে তার ইবাদত শয়তানের জন্য হয়ে যাবে।

একটা আয়াত এবং তার সাথে সম্পর্কযুক্ত একটা হাদিস বলি, তাহলে বুঝতে আরো সহজ হবে-

مَنْ كَفَرَ بِاللّٰهِ مِنْۢ بَعْدِ اِيْمَانِهٖۤ اِلَّا مَنْ اُكْرِهَ وَقَلْبُهٗ مُطْمَئِنٌّۢ بِالْاِيْمَانِ وَلٰكِنْ مَّنْ شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِّنَ اللّٰهِ ۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ

যে ঈমান আনার পর আল্লাহর সাথে কুফরী করেছে এবং যারা তাদের অন্তর কুফরী দ্বারা উন্মুক্ত করেছে, তাদের উপরই আল্লাহর ক্রোধ এবং তাদের জন্য রয়েছে মহাআযাব। ঐ ব্যক্তি ছাড়া যাকে বাধ্য করা হয় (কুফরির ঘোষনা দিতে অথবা জালেমদের মর্জি অনুযায়ী কাজ করতে) অথচ তার অন্তর থাকে ঈমানে পরিতৃপ্ত।

An-Nahl 16:106

আম্মার ইবনে ইয়াসির(রা.) চোখের সামনে তাঁর পিতা ও মাতাকে কঠিন শাস্তি দিয়ে দিয়ে শহীদ করা হয়। তারপর তাঁকে এমন কঠিন অসহনীয় শাস্তি দেয়া হয় যে, শেষ পর্যন্ত নিজের প্রাণ বাঁচাবার জন্য তিনি কাফেরদের চাহিদা মত সবকিছু বলেন। এরপর তিনি কাঁদতে কাঁদতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে হাযির হন এবং আরয করেনঃ

يَا رَسُولَ اللهِ مَا تُرِكتُ حَتَّى سَبَبتُكَ وَذَكَرتُ اَلِهَتَهُم بِخَيرٍ

হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনাকে মন্দ এবং তাদের উপাস্যদেরকে ভাল না বলা পর্যন্ত তারা আমাকে ছেড়ে দেয়নি।”

রসূলুল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন, كَيفَ تَجِدُ قُلبَكَ ؟তোমার মনের অবস্থা কি?” জবাব দিলেন, مُطمَئِنَّا بِالِايمَانِঈমানের ওপর পরিপূর্ণ নিশ্চিন্তে।” একথায় নবী বললেনঃ اِن عَادُوا فَعُد “যদি তারা আবারো এ ধরনের জুলুম করে তাহলে তুমি তাদেরকে আবারো এসব কথা বলে দিয়ো।” [সুনান আবু দাউদ, সুনান আল বায়হাকি ]

এইখান থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, আনুগত্য না মেনে কোন কাজ করলে তা ইবাদত হবে না কেননা, পরিস্থিতির মুখে কুফরির ঘোষণা দিলেও, ইবাদতের সংজ্ঞা থেকে স্পষ্ট ইবাদত হতে হলে যে কাজটা করা হয় তা আনুগত্য মেনে করতে হয়

তাগুত: তাগুত হল সে – যে আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধে গিয়ে অবাধ্যতার সীমা অতিক্রম করে। অর্থাৎ দিনের পর দিন তার অবাধ্যতা প্রকাশ করে যেমনঃ নিষ্ঠুর শাসক।

তাহলে, যারা নিজে আল্লাহর আনুগত্য করে না এবং অন্যদেরও আল্লাহর আনুগত্য করতে নিষেধ করে, তাদেরকে তাগুত বলা যায়

ধরুন, একটি দলের সভাপতি/নেতা। তার  অধীনস্থ নেতাদেরকে বলল, "তোমরা তোমাদের কর্মীবাহিনী নিয়ে মানুষের উপর জুলুম করো, তাদের জমি দখল করে নাও।" আর নেতাকর্মীরা তাই করলো, যা সে নির্দেশ দিয়েছিল। দিনের পর দিন সে এই নিষ্ঠুরতা চালিয়ে যাচ্ছিল।

اُحْشُرُوا الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا وَاَزْوَاجَهُمْ وَمَا كَانُوْا يَعْبُدُوْنَ ۙ

"জালেমদেরকে, তাদের সহযোগীদের (নেতা-কর্মীদের) এবং আল্লাহ ব্যতীত যারা তাদের আনুগত্য করেছিল, তাদের একত্রিত করো; তারপর তাদেরকে জাহান্নামের পথে নিয়ে যাও।" (সূরা আস-সাফফাত ৩৭:২২-২৩)

·        এখানে, সভাপতি হচ্ছে তাগুত, কারণ তিনি আল্লাহর আদেশের বিপরীতে গিয়ে বার বার অন্যায় কাজের আদেশ দিয়েছেন এবং  মানুশজন তার ইবাদত করেছে

·        যারা তার আদেশ পালন করেছে, তারা জালেম।

·        যারা জুলুম করতে সহযোগিতা করেছে, তারা জালেমের সাহায্যকারী।

এই তিন গ্রুপের স্থান হল জাহান্নাম।

যেখানে আল্লাহর আদেশ আছে, সেখানে আল্লাহর আনুগত্য মেনে নিয়ে সে অনুসারে কাজ করতে হবে, ঠিক যেমন রাসূলরা করেছেন। যদি আপনি আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে কাজ করেন, তাহলে আপনি আল্লাহর ইবাদত করছেন।

আর যদি আপনি আপনার মনের আনুগত্য, নেতার আনুগত্য অথবা পূর্বপুরুষের আনুগত্য মেনে নিয়ে কাজ করেন, তাহলে মূলত আপনি যার আনুগত্য করছেন, তারই ইবাদত করছেন।

মুসলমানদের ও অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? আমরা মসজিদে গিয়ে সিজদাহ দিই, তারা তাদের মন্দিরে মূর্তির সামনে সিজদাহ দেয় অথবা মাথা নত করে। পার্থক্য হচ্ছে, আমরা যেটা করি, তার প্রমাণ কুরআনে আছে। আর তারা যেটা করে, তাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থে সেই কাজ করার নির্দেশনা আছে কিনা, সেটা প্রশ্ন করা উচিত।

وَيَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهٖ سُلْطٰنًا وَّمَا لَيْسَ لَهُمْ بِهٖ عِلْمٌ ؕ وَمَا لِلظّٰلِمِينَ مِنْ نَّصِيرٍ

"আর তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদত করে, যার জন্য আল্লাহ কোনো প্রমাণ নাযিল করেননি এবং যার ব্যাপারে তাদেরও কোনো জ্ঞান নেই। আর যালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।" (সূরা আল-হজ্জ ২২:৭১)

এখন, যদি আপনি কুরআনে বলা হয়নি এমন কিছু ইবাদত হিসেবে গ্রহণ করে করেন, তাহলে সেটা আল্লাহর ইবাদত হবে না, বরং আপনার মন বা যার কথা অনুসারে করছেন, তার ইবাদত হবে।

আরেকটি উদাহরণ দিই: রোজা তো ইবাদত, তাহলে ইদের দিনে রোজা রাখা হারাম কেন?

ইবাদত মূলত সেটাই, যা আল্লাহ যেভাবে করতে বলেছেন, তা করা। যদি আপনি নিজের মনের মতো কিছু করেন, তাহলে সেটা আপনার মনের ইবাদত হবে।

তাহলে, আমরা কোনো শাসক, নেতা, বাবা-মা, অফিস বস অথবা জীবনসঙ্গীর আনুগত্য করতে পারি না। শুধু আল্লাহর আনুগত্য করতে হবে, যা তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।

وَالَّذِينَ اجْتَنَبُوا الطَّاغُوتَ أَنْ يَعْبُدُوهَا وَأَنَابُوا إِلَى اللَّهِ لَهُمْ الْبُشْرَىٰ ۚ فَبَشِّرْ عِبَادِي

"আর যারা তাগুতের ইবাদত পরিহার করে এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ। অতএব, আমার বান্দাদেরকে সুসংবাদ দাও।" (সূরা আয-যুমার ৩৯:১৭)

তাহলে, মনে রাখতে হবে: ইবাদত একটি আরবি শব্দ। রাসূলের জন্মের আগেও মানুষ এই শব্দটি ব্যবহার করত। এর অর্থ হলো আনুগত্য মেনে কাজ করা।

ইবাদত যে কাউকে যে কেউ করতে পারে। কিন্তু এক আল্লাহর ইবাদত হল—আল্লাহ কুরআনে যা করতে বলেছেন, তা করা এবং যা নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকা।

উপরের আলোচনা অনুযায়ী, মানুষ বিভিন্নভাবে ইবাদত করতে পারে, যা নীচে উল্লেখিত:

মনের ইবাদত:

    • যদি কেউ আল্লাহর আদেশ মেনে না চলেই নিজের মনোভাব অনুসারে কাজ করে, তাহলে তার সেই কাজ আসলে তার মনেরই ইবাদত হবে, আল্লাহর নয়।

শাসক/সরকারের ইবাদত:

    • যদি কেউ শাসক বা সরকারের নির্দেশ অনুসারে কাজ করে যা আল্লাহর নির্দেশের বিপরীতে, তাহলে তার সেই কাজ শাসকের ইবাদত হবে, আল্লাহর নয়।

নেতার ইবাদত:

    • যদি কেউ নেতার আদেশ পালন করে যেটি আল্লাহর নির্দেশনার বিরুদ্ধে, তাহলে তার সেই কাজ নেতার ইবাদত হবে, আল্লাহর নয়।

অন্যদের ইবাদত:

    • যদি কেউ তার বাবা-মা, অফিস বস, অথবা জীবনসঙ্গীর আদেশ পালন করে, যা আল্লাহর আদেশের সাথে সাংঘর্ষিক, তাহলে তার সেই কাজ ঐ ব্যক্তিদের ইবাদত হবে, আল্লাহর নয়।

সংক্ষেপে, ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর আদেশ মেনে চলার মাধ্যমে করা উচিত। অন্য কারো আদেশ যদি আল্লাহর আদেশের বিরোধী হয়, তাহলে সেটি আল্লাহর ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে না। আমাদের সমস্ত আনুগত্য ও ইবাদত আল্লাহর জন্য হওয়া উচিত, যেমনটি কোরআনে আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন

নোটঃ প্রশ্ন হলো, মানুষ মানুষকে যে দাস বানায় বা আগে যে দাস প্রথা প্রচলিত ছিল, তাদেরকে কি আল্লাহ মানুষের দাস বলেছে

দুনিয়ার চোখে যারা স্বাধীন না অথবা যারা কারো অধীনে আছে বা দাস, তাদেরকে আল্লাহ পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন—“মা মালাকাত আইমানুকুম” অর্থাৎ যারা তোমাদের অধীনে আছে। (আন-নিসা ৪:৩৬, আন-নাহল ১৬:৭১)। 

কুরআনে আল-আবদ (العبد) শব্দটি আমরা প্রচলিত যে দাস-দাসী বুঝি, সে অর্থে একবারও ব্যবহার হয়নি। 

"আল-আবদ" (العبد) এর যে ধারণা, সেখানে জোর করে কাউকে দিয়ে কিছু করানোর বিষয়টা নেই। আবদ সবসময় স্বেচ্ছায় ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করে।

আর, "মা মালাকাত আইমানুকুম" যারা, তারা স্বাধীন না হওয়ায় তাদের হিসাব আলাদা। তারাও "আল-আবদ" (العبد), কিন্তু তারা কারো না কারো অধীনে থাকে। এই কারণে কুরআনে শাস্তির বিধান যারা “মা মালাকাত আইমানুকুম,” তাদের জন্য ভিন্ন, ক্ষেত্রবিশেষে অর্ধেক। (এই বিষয়ে আয়াত পাবেন আন-নিসা ৪:২৫)।

By Md. Ayub Ali October 10, 2024

Øখুশিমনে আনুগত্য মেনে যার জন্য কাজ করা হয় তাকে ইলাহ বলে। আর, যারা শুধুমাত্র এক আল্লাহ্‌র আনুগত্য খুশিমনে মেনে কাজ করে, তাদের ইলাহ শুধুমাত্র আল্লাহ।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন- ইলাহ শব্দের অর্থ হলো "মাবুদ"। যার ইবাদত করা হয় তাকে মাবুদ বলা হয়। অর্থাৎ, যার আনুগত্য মেনে নিয়ে মানুষ সেই অনুসারে কাজ করে, তাকে ইলাহ বলা হয়।

চতুর্থ হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ ভাষাবিদ ও অভিধান প্রণেতা হুসাইন আহমদ ইবনু ফারিস (মৃত্যু ৩৯৫ হিজরী) তার বিখ্যাত গ্রন্থ “মাকায়িস আল-লুগাহ” তে এই শব্দের সংজ্ঞাতে লিখেনঃ

"হামজা, লাম ও হা= ইলাহ: ধাতুটির একটিই মূল অর্থ, তা হলো যিনি মাবূদ। আল্লাহ ইলাহ, কারন মানুষ তার ইবাদত করে।[ইবনু ফারিস, মু'জামু মাকাইসিলুগাহ ১/১২৭]

আরবি ভাষায় সব পূজিত ব্যক্তি, বস্তু বা দ্রব্যকেই 'ইলাহ' বলা হয়। [ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহিমাহুল্লাহ), কুরআন সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা ৯৩]

তৎকালীন আরবরা যাদের কথা অনুসারে চলত, তাদেরকেই তারা 'ইলাহ' ডাকতো। আবু জেহেল, আবু লাহাব সহ যাদের কথায় তারা মানত, তাদেরকেও 'ইলাহ' ডাকতো।

আপনি আল্লাহর আনুগত্যের পরিবর্তে যাদের আনুগত্য করেন, তারা সকলেই 'ইলাহ' হতে পারে। ইলাহ হতে পারে শাসক, মন, বাবা-মা, ভাই-বোন, আলেম, বন্ধু, মূর্তি, নেতা—যেকোনো কিছু।

তাই বলা হয়,

Ilah is someone or something you obey and act in accordance with that obedience. Or, Ilah is an authority you accept as absolute and act in accordance with that authority.

অর্থাৎ ইলাহ হলো এমন কেউ বা কিছু, যার আনুগত্য আপনি মেনে চলেন এবং সেই আনুগত্য অনুযায়ী কাজ করেন। অথবা, ইলাহ হলো এমন একটি কর্তৃত্ব, যাকে আপনি চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ করেন এবং সেই কর্তৃত্ব অনুযায়ী কাজ করেন।

আসুন কুরআন থেকে দেখি:

اَرَءَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلٰـهَهٗ هَوٰىهُ ۙ

"তুমি কি তাকে দেখেছো যে তার মনকে ইলাহ বানিয়েছে?" 

Al-Furqan 25:4

মন কিভাবে ইলাহ হয়? সহজভাবে বলতে গেলে, যদি আপনার মন বলে মদ খাও, আর আপনি মনের আনুগত্য মেনে মদ খান, তাহলে আপনার মন আপনার ইলাহ হয়ে যায়।

যদি আপনার অফিস বস বলেন, "ওজনে কম দাও," আর আপনি সেটা করেন, তাহলে বস আপনার ইলাহ হয়ে যান।

অন্যদিকে, যদি আপনি শাসকের আনুগত্য মেনে কাজ করেন, তাহলে শাসকও ইলাহ হয়ে যায়।

وَقَالَ فِرْعَوْنُ يٰۤاَيُّهَا الْمَلَاُ مَا عَلِمْتُ لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرِيْ 

"আর ফির‘আউন বলল, ‘হে পারিষদবর্গ, আমি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ আছে বলে জানি না।’" 

Al-Qasas 28:38

قَالَ لَئِنِ اتَّخَذْتَ اِلٰـهًا غَيْرِيْ لَاَجْعَلَنَّكَ مِنَ الْمَسْجُوْنِيْنَ 

"ফির‘আউন বলল, ‘যদি তুমি আমাকে ছাড়া কাউকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ কর, তাহলে আমি তোমাকে কয়েদীদের অন্তর্ভুক্ত করব।’" 

Ash-Shu'ara' 26:29

ফেরাউন নিজেকে আল্লাহ দাবি করে নাই, এই দাবি কেও করতেও পারে না; বরং সে নিজেকে ইলাহ দাবি করেছে যে, তার কথামত মিশরের সবাইকে চলতে হবে।

শাসকদেরও ইলাহ থাকতে পারে। ধরুন, আমি বাংলাদেশের সরকার প্রধান। মানুষ আমার কথা শুনে, কিন্তু আমি আল্লাহ্‌র আনুগত্যের পরিপন্থি ভারত বা আমেরিকার কথামত চলি। তাহলে আমার ইলাহ হবে ভারত বা আমেরিকা।

وَقَالَ الْمَلَاُ مِنْ قَوْمِ فِرْعَوْنَ اَتَذَرُ مُوْسٰي وَقَوْمَهٗ لِيُفْسِدُوْا فِي الْاَرْضِ وَيَذَرَكَ وَاٰلِهَتَكَ ؕ قَالَ سَنُقَتِّلُ اَبْنَآءَهُمْ وَنَسْتَحْيٖ نِسَآءَهُمْ ۚ وَاِنَّا فَوْقَهُمْ قٰهِرُوْنَ
"
আর ফির‘আউনের কওমের সভাসদগণ বলল, ‘আপনি কি মূসা ও তার কওমকে ছেড়ে দেবেন যাতে তারা যমীনে ফাসাদ করে এবং আপনাকে ও আপনার ইলাহদেরকে বর্জন করবে?’"
Al-A'raf 7:127

এখানে দেখা যাচ্ছে, ফির‘আউনেরও অনেক ইলাহ ছিল।

ইলাহ হতে পারে মূর্তি, হতে পারে সূর্যও। তাই, সূর্যের আরেক নাম 'ইলাহাহ'

এখন প্রশ্ন হলো, মূর্তি তো জড় পদার্থ, তা কিভাবে আনুগত্য নেয়? আসলে, মূর্তি আনুগত্য নিতে পারে না, কিন্তু মানুষ মনে মনে বিশ্বাস করে যে, মূর্তিটি আনুগত্য নিচ্ছে এবং এটা ওটা করতে বলেছে।

এই কারণে কুরআনে সরাসরি মূর্তিকে ইলাহ বলা হয়নি:

وَاِذْ قَالَ اِبْرٰهِيْمُ لِاَبِيْهِ اٰزَرَ اَتَتَّخِذُ اَصْنَامًا اٰلِهَةً
"
আর (স্মরণ কর) যখন ইবরাহীম তার পিতা আযরকে বলেছিল, ‘তুমি কি মূর্তিগুলোকে ইলাহরূপে গ্রহণ করছ?’"
Al-An'am 6:74

এটি মূলত একটি টিসকারী মূলক কথা যে, তোমার আচরণ দেখে মনে হচ্ছে মূর্তি তোমার আনুগত্য নিচ্ছে এবং মূর্তি তোমাকে এটি করতে বলেছে , অথচ তা কেবল জড় পদার্থ ছাড়া আর কিছুই নয়।

ইলাহ হতে পারে এমন বিষয়সমূহ

১. মানবীয় কর্তৃত্ব:

  • শাসক: যদি কেউ শাসকের নির্দেশ পালন করতে গিয়ে  আল্লাহর গাইডেন্সের বিপরীত কিছু করে, তাহলে সেই শাসক তার ইলাহ হয়ে যায়।
  • অফিস বস: অফিস বসের নির্দেশে আল্লাহর নির্দেশনার বিপরীত কিছু করলে, বসের আনুগত্যের মাধ্যমে বস ইলাহ হয়ে যায়।

২. পারিবারিক সদস্য:

  • বাবা-মা: যদি বাবা-মা এমন কিছু করার নির্দেশ দেন যা আল্লাহর নির্দেশনার বিপরীত, এবং কেউ তাদের নির্দেশ অনুসরণ করে, তাহলে বাবা-মা ইলাহ হয়ে যায়।

৩. অন্যরা:

  • বউ/স্বামী: যদি জীবনসঙ্গী এমন কিছু করতে বলেন যা আল্লাহর গাইডেন্সের বিপরীত, এবং কেউ সেই নির্দেশ অনুসরণ করে, তাহলে জীবনসঙ্গীও ইলাহ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
  • বাচ্চা: সন্তানদের জন্যও যদি কেউ আল্লাহর নির্দেশনার বিপরীত কিছু করে, তাহলে সন্তানের নির্দেশনা অনুসরণও ইলাহ হিসেবে গণ্য হতে পারে।

জড় পদার্থের আনুগত্যের ধারণা

জড় পদার্থ যেমন মূর্তি বা সূর্য নিজে আনুগত্য নিতে পারে না। তবে, কিছু মানুষ যদি মনে করে যে এই জড় পদার্থ তাদের নির্দেশ দিচ্ছে, তখন তারা ওই পদার্থকে ইলাহ হিসেবে মনে করে।

·         মূর্তি: মূর্তিগুলি কিছু করতে পারে না, কিন্তু যদি কেউ বিশ্বাস করে যে মূর্তি তার জন্য নির্দেশনা প্রদান করছে এবং সেই অনুযায়ী সে কাজ করে, তাহলে সে মূর্তিকে ইলাহ হিসেবে গণ্য করছে।

·         সূর্য বা অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান: সূর্য বা অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান নিজে কিছু করতে পারে না, কিন্তু যদি কেউ মনে করে যে এগুলি তার জন্য নির্দেশনা প্রদান করছে এবং সেই অনুযায়ী সে কাজ করে, তাহলে সে ওই পদার্থকে ইলাহ হিসেবে গণ্য করছে।

আল্লাহ কুরআনে যে গাইডেন্স প্রদান করেছেন, তার বিপরীতে কিছু করা এবং জড় পদার্থকে ইলাহ হিসেবে ভাবা, এসবই ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যায়। মূল বিষয় হলো, আল্লাহর নির্দেশনার বাইরে কিছু করলে এবং জড় পদার্থকে আনুগত্য করার বিশ্বাস করলে, তা ইলাহর আনুগত্য হিসেবে গণ্য হয়।

By Md. Ayub Ali October 19, 2024

তগা অর্থ - অবাধ্যতার শেষ সীমাও অতিক্রম করা। যে ব্যক্তি এই এই শেষ সীমা অতিক্রম করে, তাকে তাগুত বলা হয়।

ইমান আনার পূর্বশর্ত হল, তাগুতকে কুফর করা বা প্রত্যাখ্যান করা। আল্লাহ বলেন:

فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ بِاللّٰهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰي لَا انْفِصَامَ لَهَا
যারা তাগুতকে আবৃত (প্রত্যাখ্যান) করে এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করে, তারা দৃঢ়তম বন্ধন আঁকড়ে ধরেছে, যা কখনো ছিঁড়বে না।”
[
সূরা আল-বাকারা ২:২৫৬]

সকল নবীর দাওয়াত ছিল একটাই: শুধুমাত্র আল্লাহর আনুগত্য করতে হবে এবং অবশ্যই তাগুত থেকে দূরে থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন:

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلًا اَنِ اعْبُدُوا اللّٰهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ ۚ
আমি তো প্রত্যেক জাতির কাছে এই দাওয়াত নিয়ে একজন রসূল পাঠিয়েছি, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুত  থেকে দূরে থাক।’”
[
সূরা আন-নাহল ১৬:৩৬]

এখন, এটি স্পষ্ট যে তাগুতকে চেনা জরুরি।

চতুর্থ হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ ভাষাবিদ ও অভিধান প্রণেতা হুসাইন আহমদ ইবনু ফারিস (মৃত্যু ৩৯৫ হিজরী) তার বিখ্যাত গ্রন্থ “মাকায়িস আল-লুগাহ” তে এই শব্দের সংজ্ঞাতে লিখেনঃ যারা অবাধ্যতার সীমা অতিক্রম করে, তাদেরকে তাগুত বলা হয়। এমনকি অত্যাচারেরও একটা সীমা থাকে; যারা সেই সীমাও অতিক্রম করে, তাদেরকেও তাগুত হিসেবে গণ্য করা হয়। আরব ভাষার অভিধানবিদ আল-খলিল রহিমাহুল্লাহ বলেন, তাগুত হলেন নিষ্ঠুর এবং জালেম শাসক বা নেতা।

যখন বন্যার পানি এতটাই বেড়ে যায় যে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন বলা হয় পানি তগা করছে। আল্লাহ কুরআনে বলেন:

اِنَّا لَمَّا طَغَا الْمَآءُ 

“(নূহের প্লাবনে) যখন পানি তগা করেছিল” 

[সূরা আল-হাক্কাহ ৬৯:১১]

এখানে আল্লাহ বোঝাতে চেয়েছেন যে, পানি তার বিপদসীমা অতিক্রম করে তা মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।

নদীর পানির লেবেলকে কয়েক লেবেলে ভাগ করা থাকে যেমন: ১,,,৪....... যখন লেবেল এক এর সমান বা তার নীচে থাকে তখন বলি পানির লেবেল ঠিক আছে। কিন্তু লেবেল ১ বা স্বাভাবিক লেভেলে   অতিক্রম করলে বলি, পানি তার লেবেল অতিক্রম করে পেলেছে৷ এখন পানি যত বাড়বে, পানি তত বেশী সীমারেখা অতিক্রম করবে। এইভাবে পানির লেবেল যত বেশী অতিক্রম করবে, ক্ষয় ক্ষতির পরিমান তত বাড়তে থাকবে, এবং লেবেল দেখে বন্যার বা প্রকৃতিক দুর্যোগের  ভয়াবহতা আমরা পরিমাপ করি।

তেমনিভাবেমানুষের সীমারেখা আল্লাহ কুরআনের মাধ্যমে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন, এই সীমারেখা কোন মানুষের অতিক্রম করা নিষিদ্ধ।

কিন্তু, কিছু মানুষ আছে যারা আল্লাহর আনুগত্যের সীমারেখা মাড়িয়ে তাদের নিষ্ঠুরতার লেবেল ১ নাম্বার বা আল্লাহর দেয়া স্বাভাবিক সীমা ছাড়িয়ে অন্য ২,,,৫...লেভেলও ছাড়িয়ে যায়, যে যত বেশী লেবেল ক্রস করে সে তত বড় লেবেলের তাগুত।

যেমন ধরুন, আপনি অন্যায় ভাবে একজনকে হত্যা করলেন। এরপর অপরাধ বোধ থেকে এই কাজ আর করলেন না। কিন্তুযেহেতু আপনি মানুষ হত্যা করেছেন, আপনি আল্লাহর দেয়া নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করলেন। কিন্তু আপনি যেহেতু আর এই অন্যায় করেন নাই, তাই আপনি তাগুত না।

কিন্তু, যদি আপনি পুনরায় আবার হত্যা করলেন, আবার করলেন, শত শত মানুষ হত্যা করলেন। আপনি যত বেশী লেবেল ক্রস করবেন তত বড় লেভেলের তাগুত। হিটলার আর বাংলাদেশের শত শত ছাত্র হত্যাকারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী   দুই জনই তাগুত, কিন্তু অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী  লেবেল আলাদা।

তাগুত চিহ্নিতকরণ এবং সমাজে প্রধান প্রধান তাগুত কারা:

আনুগত্যের সর্বশেষ সীমারেখারও সীমা কারা লঙ্ঘন করে, আমরা কুরআন থেকে আরও স্পষ্টভাবে দেখতে পারি। কুরআনে আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলেছেন কাদেরকে তাগুত বলা হয় এবং কীভাবে তারা আল্লাহর দেওয়া সীমা অতিক্রম করে।

১. নিজস্ব আইন তৈরি ও বিচার ফয়সালা:
যারা আল্লাহর আইনের বাইরে গিয়ে নিজস্ব নিয়মকানুন তৈরি করে এবং মানুষকে সেই নিয়ম অনুযায়ী চালায়, তারা তাগুতের ভূমিকায় কাজ করে।
উদাহরণ: পার্লামেন্ট, সরকার প্রধান, সমাজপতি, ধর্মীয় নেতা, অফিসের বস বা পরিবারের প্রধান।
আল-কুরআন:
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ...
তুমি কি দেখনি যারা দাবি করে যে তারা তোমার কাছে এবং পূর্ববর্তী কিতাবের প্রতি ঈমান এনেছে, কিন্তু তারা তাগুতের কাছে বিচার নিয়ে যেতে চায়?”
[
সূরা আন-নিসা ৪:৬০]

২. মানুষকে আল্লাহর আনুগত্য থেকে দূরে সরিয়ে অন্যায় পথে নেওয়া:
তাগুত মানুষের মনমতো পদ্ধতি তৈরি করে, যাতে তারা আল্লাহর নিয়মের বাইরে চলে যায়।
উদাহরণ: তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, সংবাদকর্মী, প্রোপাগান্ডা টিম এবং দলের নেতারা।
আল-কুরআন:
اللّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ...
আল্লাহ ঈমানদারদের অভিভাবক, তিনি তাদের অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসেন। আর কাফিরদের অভিভাবক হল তাগুত, তারা তাদের আলো থেকে অন্ধকারে নিয়ে যায়।”
[
সূরা আল-বাকারা ২:২৫৭]

৩. আল্লাহর পথে চলাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ:
যারা কুরআন ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাগুত তাদের বিরোধিতা করে এবং ধ্বংসের চেষ্টা চালায়।
উদাহরণ: সরকার ও সমাজের কিছু গোষ্ঠী আল্লাহর রাস্তায় চলা লোকদের ওপর আক্রমণ করে।
আল-কুরআন:
الَّذِينَ آمَنُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللّهِ...
যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে, আর যারা কুফর করেছে তারা তাগুতের পথে লড়াই করে।”
[
সূরা আন-নিসা ৪:৭৬]

৪. আদর্শ ও মতবাদকে আল্লাহর আনুগত্যের উপরে স্থান দেওয়া:
যে কোনো মতবাদ বা আইডিওলজি, যা আল্লাহর আনুগত্যকে অস্বীকার করে বা অপছন্দ করে, তা তাগুত।
উদাহরণ: বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মতবাদের জনকদের অনুসরণ করা।

কিছু প্রধান তাগুতের তৈরি আদর্শ:

  • রাজনৈতিক মতবাদ:
    • লিবারেলিজম: জন লক
    • সোশ্যালিজম: কার্ল মার্ক্স
    • ফ্যাসিজম: বেনিটো মুসোলিনি
  • সামাজিক মতবাদ:
    • ফেমিনিজম: মেরি ওলস্টোনক্রাফট
    • এনভায়রনমেন্টালিজম: হেনরি ডেভিড থোরো
  • অর্থনৈতিক মতবাদ:
    • ক্যাপিটালিজম: অ্যাডাম স্মিথ
    • মার্ক্সিজম: কার্ল মার্ক্স
  • ধর্মীয় মতবাদ:
    • সেক্যুলারিজম: জর্জ জ্যাকব হলিওক
    • থিওক্রেসি: বিভিন্ন ধর্মীয় মতবাদ থেকে উদ্ভূত, আল্লাহর আনুগত্যের পরিপন্থী।
  • সাংস্কৃতিক মতবাদ:
    • পোস্টমডার্নিজম: জ্যাঁ-ফ্রাঁসোয়া লিয়োতার্দ
    • কালচারাল রিলেটিভিজম: ফ্রাঞ্জ বোয়াস

আল-কুরআন:
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ أُوتُوا نَصِيبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُونَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوتِ...
তুমি কি দেখনি, যাদেরকে কিতাবের এক অংশ দেওয়া হয়েছে? তারা জিবত ও তাগুতের প্রতি ঈমান আনে এবং কাফিরদেরকে বলে যে, তারা মুমিনদের তুলনায় অধিক সঠিক পথে রয়েছে।”
[
সূরা আন-নিসা ৪:৫১]

 জিবত الجبتঅর্থ: মূর্তি, প্রতিমা, যাদুকর, ভেলকিবাজ, যাদু ইত্যাদি।

 

এখানে একটি বিষয় বুঝতে হবে—সকল তাগুত ইলাহ হতে পারে, কিন্তু সকল ইলাহ তাগুত নয়। ইলাহ বলতে বোঝায় যার প্রতি মানুষের খুশিমনে আনুগত্য থাকে এবং মানুষ সে আনুগত্যকে কাজে রুপ দেয়কিন্তু তাগুত তার চেয়ে ভিন্ন; তারা অবাধ্যতার এমন সীমা অতিক্রম করে যে, মানুষকে জোরপূর্বক অন্যায় পথে পরিচালিত করে।

উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো নেতা অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যার আদেশ দেয় এবং কেও তা কার্যকর করে, তাহলে সেই নেতা তাগুত হয়ে যায়। আবার যে তাগুতের আনুগত্য করেছে সে তাগুত হয়ে যায় আনুগত্যকারির  ইলাহ।

ফেরাউন শাসক হিসাবে ছিল তাগুত।

اِذْهَبْ اِلٰى فِرْعَوْنَ اِنَّهٗ طَغٰى

"ফেরাউনের কাছে যাও, সে তগা করেছে।"

সুরা আন-নাযিয়াত (৭৯:১৭)

আর যে তগা বা অবাধ্যতার সীমা অতিক্রম করে তাকে তাগুত বলে।

এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মূসা (আ.)-কে নির্দেশ দিচ্ছেন ফেরাউনের কাছে যাওয়ার জন্য, কারণ ফেরাউন অহংকারী হয়ে সীমালঙ্ঘন করেছে এবং আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে।

এমন উদাহরণ সমাজে প্রচুর দেখা যায়—সরকার যখন নিরাপরাধ মানুষদের গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেয় এবং প্রশাসন তা মেনে নেয়, তখন সরকার তাগুত হিসাবে পরিগণিত হয়। এই ধরনের রাজনৈতিক নেতা, কোম্পানির বস, সমাজপতিদের আমরা তাগুত হিসেবে চিনি, কারণ তাদের একটি অনুগত অনুসারী দল থাকে যারা তাদের আদেশ মেনে চলে এবং কাজ করে।

আল-কুরআন: 

وَعَبَدَ الطَّاغُوْتَ ؕ اُولٰٓئِكَ شَرٌّ مَّكَانًا وَّاَضَلُّ عَنْ سَوَآءِ السَّبِيْلِ 

"যারা তাগুতের ইবাদত বা আনুগত্য মেনে কাজ করেছে, তারাই মর্যাদার দিক দিয়ে সবচেয়ে নিকৃষ্ট এবং সত্যপথ থেকে অনেক দূরে।" 

[সূরা আল-মায়িদা ৫:৬০]

তবে যারা তাগুতের আনুগত্য থেকে বিরত থাকে এবং আল্লাহর প্রতি অনুগত হয়, তাদের জন্য আল্লাহ জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন: 

আল-কুরআন: 

وَالَّذِيْنَ اجْتَنَبُوا الطَّاغُوْتَ اَنْ يَّعْبُدُوْهَا وَاَنَابُوْۤا اِلَي اللّٰهِ لَهُمُ الْبُشْرٰي ۚ فَبَشِّرْ عِبَادِ 

"যারা তাগুতের আনুগত্য করে না এবং আল্লাহর অভিমুখী হয়, তাদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে। অতএব, আমার বান্দাদেরকে সুসংবাদ দাও।" 

[সূরা আয-যুমার ৩৯:১৭]

এই আয়াতগুলো আমাদের শেখায় যে, যারা তাগুতের অনুগত থাকে তারা মর্যাদাহীন এবং পথভ্রষ্ট, আর যারা তাগুতের থেকে দূরে থাকে তাদের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি।

By Md. Ayub Ali October 27, 2024