Remove তাগুত Defination
Use this form to report definitions that...
- Not Suitable for Dictionary
- Offensive Content
- Misleading Etymology
- Typographical Error
- Grammar Mistake
- Ambiguous Meaning
- Duplicate Entry
- Incorrect Part of Speech
- Regional Variation Not Specified
- Inconsistent Formatting
- Incorrect Translation
- Cultural Sensitivity Issue
- Incorrect Definition
- Spelling Error
- Outdated Usage
- Missing Information
- Inappropriate Example Sentence
- Redundant Entry
- Incorrect Pronunciation
- Not a Real Word
You chose: তাগুত
তগা অর্থ - অবাধ্যতার শেষ সীমাও অতিক্রম
করা। যে ব্যক্তি এই এই শেষ সীমা অতিক্রম করে, তাকে তাগুত বলা হয়।
ইমান আনার পূর্বশর্ত হল, তাগুতকে কুফর করা বা প্রত্যাখ্যান করা। আল্লাহ বলেন:
فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ بِاللّٰهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰي لَا انْفِصَامَ لَهَا
“যারা তাগুতকে আবৃত (প্রত্যাখ্যান) করে এবং
আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করে, তারা দৃঢ়তম বন্ধন আঁকড়ে ধরেছে, যা কখনো
ছিঁড়বে না।”
[সূরা
আল-বাকারা ২:২৫৬]
সকল নবীর দাওয়াত ছিল একটাই: শুধুমাত্র আল্লাহর আনুগত্য করতে হবে এবং অবশ্যই
তাগুত থেকে দূরে থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন:
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلًا اَنِ اعْبُدُوا اللّٰهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ ۚ
“আমি তো প্রত্যেক জাতির কাছে এই দাওয়াত নিয়ে একজন রসূল পাঠিয়েছি, ‘তোমরা
আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুত থেকে দূরে
থাক।’”
[সূরা
আন-নাহল ১৬:৩৬]
এখন, এটি
স্পষ্ট যে তাগুতকে চেনা জরুরি।
চতুর্থ হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ ভাষাবিদ ও অভিধান প্রণেতা হুসাইন আহমদ ইবনু ফারিস
(মৃত্যু ৩৯৫ হিজরী) তার বিখ্যাত গ্রন্থ “মাকায়িস আল-লুগাহ” তে এই শব্দের সংজ্ঞাতে
লিখেনঃ
যারা অবাধ্যতার সীমা অতিক্রম করে, তাদেরকে
তাগুত বলা হয়। এমনকি অত্যাচারেরও একটা সীমা থাকে; যারা সেই
সীমাও অতিক্রম করে, তাদেরকেও তাগুত হিসেবে গণ্য করা হয়। আরব
ভাষার অভিধানবিদ আল-খলিল রহিমাহুল্লাহ বলেন, তাগুত হলেন
নিষ্ঠুর এবং জালেম শাসক বা নেতা।
যখন বন্যার পানি এতটাই বেড়ে যায় যে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে
চলে যায়, তখন বলা হয় পানি তগা করছে। আল্লাহ কুরআনে
বলেন:
اِنَّا لَمَّا طَغَا الْمَآءُ
“(নূহের প্লাবনে) যখন পানি তগা করেছিল”
[সূরা আল-হাক্কাহ ৬৯:১১]
নদীর পানির লেবেলকে কয়েক লেবেলে ভাগ করা থাকে যেমন: ১,২,৩,৪....... যখন
লেবেল এক এর সমান বা তার নীচে থাকে তখন বলি পানির লেবেল ঠিক আছে। কিন্তু লেবেল ১ বা
স্বাভাবিক লেভেলে অতিক্রম করলে বলি, পানি তার লেবেল
অতিক্রম করে পেলেছে৷ এখন পানি যত বাড়বে, পানি তত বেশী সীমারেখা অতিক্রম করবে।
এইভাবে পানির লেবেল যত বেশী অতিক্রম করবে, ক্ষয় ক্ষতির পরিমান তত বাড়তে থাকবে, এবং লেবেল দেখে
বন্যার বা প্রকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতা আমরা
পরিমাপ করি।
তেমনিভাবে, মানুষের সীমারেখা আল্লাহ কুরআনের মাধ্যমে
আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন,
এই সীমারেখা কোন মানুষের অতিক্রম করা নিষিদ্ধ।
কিন্তু, কিছু
মানুষ আছে যারা আল্লাহর আনুগত্যের সীমারেখা মাড়িয়ে তাদের নিষ্ঠুরতার লেবেল ১ নাম্বার
বা আল্লাহর দেয়া স্বাভাবিক সীমা ছাড়িয়ে অন্য ২,৩,৪,৫...লেভেলও ছাড়িয়ে যায়, যে যত বেশী লেবেল
ক্রস করে সে তত বড় লেবেলের তাগুত।
যেমন ধরুন, আপনি
অন্যায় ভাবে একজনকে হত্যা করলেন। এরপর অপরাধ বোধ থেকে এই কাজ আর করলেন না। কিন্তু, যেহেতু আপনি মানুষ হত্যা করেছেন, আপনি আল্লাহর
দেয়া নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করলেন। কিন্তু আপনি যেহেতু আর এই অন্যায় করেন নাই, তাই আপনি তাগুত
না।
কিন্তু, যদি
আপনি পুনরায় আবার হত্যা করলেন, আবার করলেন, শত শত মানুষ হত্যা করলেন। আপনি যত বেশী
লেবেল ক্রস করবেন তত বড় লেভেলের তাগুত। হিটলার আর বাংলাদেশের শত শত ছাত্র হত্যাকারী
সাবেক প্রধানমন্ত্রী দুই জনই তাগুত, কিন্তু অপরাধের
মাত্রা অনুযায়ী লেবেল আলাদা।
তাগুত চিহ্নিতকরণ
এবং সমাজে প্রধান প্রধান তাগুত কারা:
আনুগত্যের সর্বশেষ সীমারেখারও সীমা কারা লঙ্ঘন করে, আমরা কুরআন থেকে আরও স্পষ্টভাবে দেখতে পারি। কুরআনে আল্লাহ
স্পষ্টভাবে বলেছেন কাদেরকে তাগুত বলা হয় এবং কীভাবে তারা আল্লাহর দেওয়া সীমা
অতিক্রম করে।
১. নিজস্ব
আইন তৈরি ও বিচার ফয়সালা:
যারা আল্লাহর আইনের বাইরে গিয়ে নিজস্ব নিয়মকানুন তৈরি করে এবং মানুষকে সেই
নিয়ম অনুযায়ী চালায়,
তারা তাগুতের ভূমিকায় কাজ করে।
উদাহরণ: পার্লামেন্ট,
সরকার প্রধান, সমাজপতি, ধর্মীয় নেতা, অফিসের বস
বা পরিবারের প্রধান।
আল-কুরআন:
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ...
“তুমি কি দেখনি যারা দাবি করে যে তারা তোমার কাছে এবং পূর্ববর্তী কিতাবের প্রতি
ঈমান এনেছে, কিন্তু
তারা তাগুতের কাছে বিচার নিয়ে যেতে চায়?”
[সূরা
আন-নিসা ৪:৬০]
২. মানুষকে
আল্লাহর আনুগত্য থেকে দূরে সরিয়ে অন্যায় পথে নেওয়া:
তাগুত মানুষের মনমতো পদ্ধতি তৈরি করে, যাতে তারা আল্লাহর নিয়মের বাইরে চলে
যায়।
উদাহরণ: তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, সংবাদকর্মী, প্রোপাগান্ডা টিম এবং দলের নেতারা।
আল-কুরআন:
اللّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ...
“আল্লাহ ঈমানদারদের অভিভাবক, তিনি তাদের অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসেন। আর কাফিরদের
অভিভাবক হল তাগুত, তারা
তাদের আলো থেকে অন্ধকারে নিয়ে যায়।”
[সূরা
আল-বাকারা ২:২৫৭]
৩. আল্লাহর পথে চলাদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ:
যারা কুরআন
ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাগুত তাদের বিরোধিতা
করে এবং ধ্বংসের চেষ্টা চালায়।
উদাহরণ:
সরকার ও সমাজের কিছু গোষ্ঠী আল্লাহর রাস্তায় চলা লোকদের ওপর আক্রমণ করে।
আল-কুরআন:
الَّذِينَ آمَنُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللّهِ...
“যারা
ঈমান এনেছে তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে,
আর যারা
কুফর করেছে তারা তাগুতের পথে লড়াই করে।”
[সূরা আন-নিসা ৪:৭৬]
৪. আদর্শ
ও মতবাদকে আল্লাহর আনুগত্যের উপরে স্থান দেওয়া:
যে কোনো মতবাদ বা আইডিওলজি, যা আল্লাহর আনুগত্যকে অস্বীকার করে বা অপছন্দ করে, তা তাগুত।
উদাহরণ: বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মতবাদের জনকদের অনুসরণ করা।
কিছু প্রধান তাগুতের তৈরি আদর্শ:
- রাজনৈতিক মতবাদ:
- লিবারেলিজম: জন
লক
- সোশ্যালিজম:
কার্ল মার্ক্স
- ফ্যাসিজম:
বেনিটো মুসোলিনি
- সামাজিক মতবাদ:
- ফেমিনিজম: মেরি
ওলস্টোনক্রাফট
- এনভায়রনমেন্টালিজম:
হেনরি ডেভিড থোরো
- অর্থনৈতিক
মতবাদ:
- ক্যাপিটালিজম:
অ্যাডাম স্মিথ
- মার্ক্সিজম:
কার্ল মার্ক্স
- ধর্মীয় মতবাদ:
- সেক্যুলারিজম:
জর্জ জ্যাকব হলিওক
- থিওক্রেসি:
বিভিন্ন ধর্মীয় মতবাদ থেকে উদ্ভূত,
আল্লাহর
আনুগত্যের পরিপন্থী।
- সাংস্কৃতিক
মতবাদ:
- পোস্টমডার্নিজম:
জ্যাঁ-ফ্রাঁসোয়া লিয়োতার্দ
- কালচারাল
রিলেটিভিজম: ফ্রাঞ্জ বোয়াস
আল-কুরআন:
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ أُوتُوا نَصِيبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُونَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوتِ...
“তুমি কি দেখনি, যাদেরকে
কিতাবের এক অংশ দেওয়া হয়েছে? তারা জিবত ও তাগুতের প্রতি ঈমান আনে এবং কাফিরদেরকে বলে যে, তারা
মুমিনদের তুলনায় অধিক সঠিক পথে রয়েছে।”
[সূরা
আন-নিসা ৪:৫১]
জিবত الجبتঅর্থ: মূর্তি, প্রতিমা, যাদুকর, ভেলকিবাজ, যাদু ইত্যাদি।
এখানে একটি বিষয় বুঝতে হবে—সকল তাগুত ইলাহ হতে পারে, কিন্তু সকল
ইলাহ তাগুত নয়। ইলাহ বলতে বোঝায় যার প্রতি মানুষের খুশিমনে আনুগত্য থাকে এবং
মানুষ সে আনুগত্যকে কাজে রুপ দেয়। কিন্তু
তাগুত তার চেয়ে ভিন্ন;
তারা অবাধ্যতার এমন সীমা অতিক্রম করে যে, মানুষকে জোরপূর্বক অন্যায় পথে
পরিচালিত করে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো নেতা
অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যার আদেশ দেয় এবং কেও তা কার্যকর করে, তাহলে সেই নেতা তাগুত হয়ে যায়। আবার যে তাগুতের আনুগত্য করেছে সে তাগুত হয়ে যায়
আনুগত্যকারির ইলাহ।
ফেরাউন শাসক হিসাবে ছিল তাগুত।
اِذْهَبْ اِلٰى
فِرْعَوْنَ اِنَّهٗ طَغٰى
"ফেরাউনের কাছে যাও, সে তগা করেছে।"
সুরা আন-নাযিয়াত (৭৯:১৭)
আর যে তগা বা অবাধ্যতার সীমা অতিক্রম করে তাকে তাগুত বলে।
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মূসা (আ.)-কে নির্দেশ দিচ্ছেন ফেরাউনের কাছে যাওয়ার
জন্য, কারণ ফেরাউন অহংকারী হয়ে সীমালঙ্ঘন করেছে এবং আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ
করেছে।
এমন উদাহরণ সমাজে প্রচুর দেখা যায়—সরকার যখন নিরাপরাধ মানুষদের গুলি করে
হত্যার নির্দেশ দেয় এবং প্রশাসন তা মেনে নেয়, তখন সরকার তাগুত হিসাবে পরিগণিত হয়।
এই ধরনের রাজনৈতিক নেতা,
কোম্পানির বস, সমাজপতিদের
আমরা তাগুত হিসেবে চিনি,
কারণ তাদের একটি অনুগত অনুসারী দল থাকে যারা তাদের আদেশ মেনে চলে এবং কাজ করে।
আল-কুরআন:
وَعَبَدَ الطَّاغُوْتَ ؕ اُولٰٓئِكَ شَرٌّ مَّكَانًا وَّاَضَلُّ عَنْ سَوَآءِ السَّبِيْلِ
"যারা
তাগুতের ইবাদত বা আনুগত্য মেনে কাজ করেছে, তারাই মর্যাদার দিক দিয়ে সবচেয়ে
নিকৃষ্ট এবং সত্যপথ থেকে অনেক দূরে।"
[সূরা
আল-মায়িদা ৫:৬০]
তবে যারা তাগুতের আনুগত্য থেকে বিরত থাকে এবং আল্লাহর প্রতি অনুগত হয়, তাদের জন্য
আল্লাহ জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন:
আল-কুরআন:
وَالَّذِيْنَ اجْتَنَبُوا الطَّاغُوْتَ اَنْ يَّعْبُدُوْهَا وَاَنَابُوْۤا اِلَي اللّٰهِ لَهُمُ الْبُشْرٰي ۚ فَبَشِّرْ عِبَادِ
"যারা
তাগুতের আনুগত্য করে না এবং আল্লাহর অভিমুখী হয়, তাদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে। অতএব, আমার
বান্দাদেরকে সুসংবাদ দাও।"
[সূরা
আয-যুমার ৩৯:১৭]
এই আয়াতগুলো আমাদের শেখায় যে, যারা তাগুতের অনুগত থাকে তারা মর্যাদাহীন এবং পথভ্রষ্ট, আর যারা তাগুতের থেকে দূরে থাকে তাদের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি।