Remove রব Defination

Use this form to report definitions that...
  1. Not Suitable for Dictionary
  2. Offensive Content
  3. Misleading Etymology
  4. Typographical Error
  5. Grammar Mistake
  6. Ambiguous Meaning
  7. Duplicate Entry
  1. Incorrect Part of Speech
  2. Regional Variation Not Specified
  3. Inconsistent Formatting
  4. Incorrect Translation
  5. Cultural Sensitivity Issue
  6. Incorrect Definition
  7. Spelling Error
  1. Outdated Usage
  2. Missing Information
  3. Inappropriate Example Sentence
  4. Redundant Entry
  5. Incorrect Pronunciation
  6. Not a Real Word
You chose: রব

"রব" শব্দটি মূলত যেকোনো দাতা বা প্রদানকারী অর্থে আরবদের মধ্যে ব্যবহৃত হতো। যে কেউ কিছু দান করে, সিদ্ধান্ত দেয়, অর্থ দেয়, খাবার দেয়, এমনকি লালন পালন করে—তাকে "রব" বলা হতো। লালন পালন করতে হলে তো কিছু দিতে হয়—যেমন: পানি, বাসস্থান, বস্ত্র, চিকিৎসা ইত্যাদি। আরবরা এই কারণেই এসব ক্ষেত্রে "রব" শব্দটি ব্যবহার করত।
তবে, যখন "আল-রব" শব্দটি ব্যবহার করা হয়, তখন সেটা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য। আল্লাহ হচ্ছেন বিশ্বজগতের একমাত্র রব, এবং আল্লাহ ছাড়া কেউ এই দাবি করতে পারে না—পাগল ছাড়া।

আজকে আমরা "রব" শব্দের প্রকৃত অর্থ ভুলে যাওয়ার ফলে, আধুনিক যুগের "ফেরাউন"দের চিহ্নিত করতে পারছি না।
আসুন দেখি এই ব্যাপারে আল-কুরআন কি বলে—

"وَقُلْ رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيٰنِيْ صَغِيْرًا"
হে প্রভু! আমার পিতামাতার প্রতি দয়া করো, যেমন তারা আমাকে ছোট থাকতে (দয়া দিয়ে) লালনপালন করেছেন।’
(
আল-কুরআন, আল-ইসরা ১৭:২৪)
এখানে বাবা-মা বুঝাতে "রব" শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে।

আরেকটি উদাহরণ পাওয়া যায়,  ইউসুফ নবী যখন জেলখানায় ছিলেন তিনি তখন বাদশাহ আজিজকে তার সংগীদের রব বলে সম্বোধন করেছেন -

 

"يٰصَاحِبَيِ السِّجْنِ اَمَّاۤ اَحَدُكُمَا فَيَسْقِيْ رَبَّهٗ خَمْرًا"
হে আমার কারাসঙ্গীদ্বয়, তোমাদের একজন তার রবকে মদপান করাবে।’
(
আল-কুরআন, ইউসুফ ১২:৪১)

আবার নিম্নের আয়াতে ইউসুফ নবী তার আশ্রয়দাতাকে "রব" হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা তখনকার আরবদের ব্যবহারিক অর্থে এসেছে।

 

وَرَاوَدَتْهُ الَّتِيْ هُوَ فِيْ بَيْتِهَا عَنْ نَّفْسِهٖ وَغَلَّقَتِ الْاَبْوَابَ وَقَالَتْ هَيْتَ لَكَ ؕ قَالَ مَعَاذَ اللّٰهِ اِنَّهٗ رَبِّيْۤ اَحْسَنَ مَثْوَايَ ؕ اِنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الظّٰلِمُوْنَ

আর যে মহিলার ঘরে ইউসুফ ছিলেন, সেই (জুলেখা) তাকে কুপ্ররোচনায় প্রলুব্ধ করল। দরজাগুলো বন্ধ করে দিয়ে বলল, "এসো!" কিন্তু ইউসুফ বললেন, "আল্লাহর আশ্রয় চাই! নিশ্চয় তিনি (তোমার স্বামী আজিজ) আমার রব; তিনি আমার থাকার সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন। নিশ্চয়ই জালিমরা কখনো সফল হয় না।"
(
আল-কুরআন, ইউসুফ ১২:২৩)

এখানে ইউসুফ নবী তার আশ্রয়দাতা আজিজকে "রব" হিসেবে উল্লেখ করছেন, যা তৎকালীন আরবদের দৈনন্দিন ব্যবহারের একটি উদাহরণ।

আবার, আল্লাহ নিজেই আজিজকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন জেলখানা থেকে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তির "রব" হিসাবে—

وَقَالَ لِلَّذِيْ ظَنَّ اَنَّهٗ نَاجٍ مِّنْهُمَا اذْكُرْنِيْ عِنْدَ رَبِّكَ ۫  فَاَنْسٰهُ الشَّيْطٰنُ ذِكْرَ رَبِّهٖ فَلَبِثَ فِي السِّجْنِ بِضْعَ سِنِيْنَ

আর তাদের দু'জনের মধ্যে যে মুক্তি পাবে বলে সে ধারণা করেছিল, তাকে বলল, “তোমার রবের কাছে আমার কথা উল্লেখ করবে। কিন্তু শয়তান তাকে তার "রব"-এর কাছে ইউসুফের কথাটি উল্লেখ করার বিষয়টি ভুলিয়ে দেয়, ফলে ইউসুফ আরও কয়েক বছর জেলে অবস্থান করেন।”’
(
আল-কুরআন, ইউসুফ ১২:৪২)

এই আয়াতগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে তৎকালীন আরবরা শাসকদেরও "রব" বলে ডাকত।

এত কিছু বলার মূল কারণ হলো আজকের যুগের "ফিরাউন"দের চেনা। যেমন ফিরাউন নিজেকে শাসক অর্থে "রব" দাবি করেছিল। প্রথমে সে বলেছে—

"وَنَادٰي فِرْعَوْنُ فِيْ قَوْمِهٖ قَالَ يٰقَوْمِ اَلَيْسَ لِيْ مُلْكُ مِصْرَ وَهٰذِهِ الْاَنْهٰرُ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِيْ ۚ اَفَلَا تُبْصِرُوْنَ"
আর ফির‘আউন তার কওমের মধ্যে ঘোষণা দিয়ে বলল, “হে আমার কওম! মিসরের রাজত্ব কি আমার নয়? আর এই নদীগুলো কি আমার নিয়ন্ত্রণে প্রবাহিত হচ্ছে না? তোমরা কি দেখছ না?”’
(
আল-কুরআন, আয-যুখরুফ ৪৩:৫১)

প্রথমে, ফিরাউন নিজেকে মিশরের শাসক হিসেবে ঘোষণা করে। দ্বিতীয়ত, এখন যেমন টেকনোলজি ব্যবহার করে নদী ও পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হতো, ফিরাউনও তার সময়কার টেকনোলজির ক্ষমতা ব্যবহার করত।

বর্তমান সরকারগুলোর মতোই ফিরাউনও তার সময়কার পানি, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করত। বর্তমান শাসকরা যেমন যখন যেখানে চায় এইগুলো  সরবরাহ করতে পারে, আবার বন্ধও করতে পারে।

এটা থেকে স্পষ্ট হয় যে মানুষ বিভিন্নজনকে "রব" বানায়।

কিন্তু যেখানে আল্লাহই একমাত্র রব, সেখানে তাঁর স্থানে অন্য কাউকে "রব" হিসেবে মর্যাদা দেওয়া যাবে না। আল্লাহ বলেন—

 

اِتَّخَذُوْۤا اَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ اَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللّٰهِ وَالْمَسِيْحَ ابْنَ مَرْيَمَ ۚ وَمَاۤ اُمِرُوْۤا اِلَّا لِيَعْبُدُوْۤا اِلٰـهًا وَّاحِدًا ۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ؕ سُبْحٰنَهٗ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ

যে বিষয়ে আল্লাহ নিজেকে রব দাবি করেছে, সেবিষয়ে তারা আল্লাহর পরিবর্তে তাদের (ধর্মীয় আলেম) যাজক ও পাদ্রীদেরকে এবং মরিয়মের পুত্র ( তাদের নবী ঈসা) মসীহকে রব হিসেবে গ্রহণ করেছে।অথচ তাদেরকে একেবারেই  কোন নির্দেশ দেওয়া হয় নাই  যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে। (কেননা), আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ ( বা আনুগত্য মেনে কাজ পাওয়ার যোগ্য কেও) নাই। আল্লাহ সকল অযোগ্যতা থেকে মুক্ত, তা সত্বেও  তারা আল্লাহর সাথে অনেককে অংশীদার করে।
(আল-কুরআন, আত-তাওবাহ ৯:৩১)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় অনেকে নিম্নের হাদিসটি উল্লেখ করেন—

তিরমিযীর বর্ণনা অনুযায়ী, দানবীর হাতেম তাই-এর পুত্র হযরত আদী ইবনে হাতেম নবী (সা.) এর কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি তখন খ্রিস্টান ছিলেন এবং নবী (সা.)-কে কিছু প্রশ্ন করেন। এর মধ্যে একটি ছিল, কুরআনের এই আয়াতে উলামা ও দরবেশদেরকে রব বানানোর অর্থ কী। নবী (সা.) উত্তরে বলেন, “তারা যেগুলোকে হারাম বলত, তোমরা সেগুলোকে হারাম বলে মেনে নিতে এবং যেগুলোকে হালাল বলত, সেগুলোকে হালাল বলে মেনে নিতে। একথা কি সত্য নয়?” হযরত আদী বলেন, “হ্যাঁ, এটি ঠিক, আমরা এভাবেই করতাম।” তখন রসূলুল্লাহ বলেন, “এটিই হলো তাদেরকে রব বানিয়ে নেওয়া।”

এ থেকে স্পষ্ট হয়, আল্লাহর নির্দেশনা বা কিতাবের সনদ ছাড়া যারা মানবজীবনের জন্য হালাল ও হারাম নির্ধারণ করে, তারা নিজেদের ধারণা অনুযায়ী আল্লাহর সার্বভৌমত্বের মর্যাদায় বসে যায়। আর যারা তাদের এই ক্ষমতা মেনে নেয়, তারা কার্যত তাদেরকে আল্লাহর স্হলে তাদের "রব" বানিয়ে নেয়।

উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, ধর্মীয় পণ্ডিতরাও "রব" হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে তারা ইসা (আ.)-কে রব বানাল?

আমরা জানি, নবীরা আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া আল্লাহ্র নাম ব্যবহার করে কিছু করেননি। কিন্তু তাদের মৃত্যুর পর মানুষ তাদের নামে মিথ্যা গল্প বা জাল হাদিস তৈরি করেছে, যা তারা কখনো বলেননি বা করেননি।

যেমন: ইসা (আ.) কখনো নিজেকে আল্লাহ দাবি করেননি। খ্রিস্টানরা এখন যেসব ইবাদত করে, তার অনেকগুলোই ইসা (আ.) নিজে করেননি বা করতে বলেননি। কিন্তু তার অনুসারীরা তার নামে জাল ঘটনা বা প্রমাণ দাঁড় করিয়ে তাকে "রব" হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে। অথচ ইঞ্জিলে এর কোনো প্রমাণ নেই।

আরো সহজ করে বলি: ধরুন, আপনি একটি কথা বলেননি, কিন্তু কেউ সেটা আপনার নামে চালিয়ে দিয়েছে। একইভাবে, নবী (সা.) কোনো কিছু বলেননি বা করেননি, কিন্তু তার নামে মিথ্যা দাবি করা হচ্ছে। আপনি যদি এই মিথ্যাকে গ্রহণ করেন, তাহলে এই আয়াত আপনার জন্যও প্রযোজ্য, কেননা আপনি নবী (সা.)-কে মিথ্যা "রব" বানিয়ে নিচ্ছেন।

সিদ্ধান্ত আসবে কোরআন থেকে, কিন্তু বর্তমানে কিছু সিদ্ধান্ত আসে আলেমদের ফতোয়া, পার্লামেন্ট, অথবা জাল হাদিসের ভিত্তিতে। এটি আমাদেরকে সতর্ক হতে শেখায়।

আল্লাহ বলেন—
"
اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِ"
হুকুম (সিদ্ধান্ত) একমাত্র আল্লাহরই।’
(
আল-কুরআন, ইউসুফ ১২:৬৭)

অতএব, যেখানে আল্লাহর হুকুম বিদ্যমান, সেখানে আপনি যদি অন্য কারো হুকুম মানেন, তাহলে আল্লাহর পরিবর্তে আপনি তাকে "রব" হিসেবে গ্রহণ করলেন।

তাহলে, "ইলাহ" এবং "রব" এর মধ্যে পার্থক্য কী?

"রব" এবং "ইলাহ" শব্দের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে:

"রব" শব্দটি দাতা বা প্রদানকারী অর্থে ব্যবহৃত হয়, যেমনঃ আদেশ দাতা, সিদ্ধান্ত দাতা, খাবার দাতা ইত্যাদি। ধরুন দুইজন ব্যক্তি, একজনের নাম- রফিক, আরেকজনের নাম -সায়েম। যখন রফিক সায়েমকে কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক কোন অন্যায় কাজের নির্দেশ দেয়, তখন রফিক রবের কাজ করল। কিন্তু এই কাজটির ব্যপারে সায়েম আনুগত্য করবে কি করবে না এই ব্যপার সায়েম স্বাধীন।  সায়েম যদি আনুগত্য না মানে,তাহলে রফিক তার রব না। আবার ধরেন, সায়েম মুখে মুখে মন থেকে আনুগত্য মেনে নিল, কিন্তু কাজে প্রকাশ করল না সেখেএেও সায়েম রফিককে রবের মর্যাদা দিল, কিন্তু যেহেতু কাজে প্রকাশ করে নাই তাই রফিককে সায়েম ইলাহের মর্যাদা দিল না।

আর "ইলাহ" হলেন গ্রহীতা অথবা যার আনুগত্য করা হয় , তাকে ইলাহ বলে।  আর, যখন রফিক সায়েমের কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক কোন অন্যায় আদেশ মেনে নিয়ে  তা কাজে বাস্তবায়ন করল, তখন বলা হয়, রফিক সায়েমের আনুগত্য করল অর্থাৎ তাকে ইলাহ হিসেবে মেনে নিল এবং সায়েম আনুগত্য গ্রহণ করল।যেহেতু, সায়েম আনুগত্য  গ্রহিতা, সে অর্থে সে ইলাহ।

অনেকে মনে করে জড় বস্তুও ইলাহ হতে পারে,কিন্তু সে কিভাবে আনুগত্য গ্রহণ করবে? আর যে আনুগত্য নিতে পারে না, সে কখনো ইলাহ হতে পারে না এই কারনে আল্লাহ কুরআনে মানুষ যে নিজেকে ইলাহ বানিয়েছে সে সম্পর্কে বললেও জড়বস্তুর ক্ষেত্রে সেটি বিদ্রুপাত্মক অর্থে বলেছে। তার মানে দাঁড়ায়, যে আনুগত্য নিতে পারে না তাকেও মানুষ ইলাহ মনে করে।

 যেমন, আল্লাহ আপনাকে রোজা রাখতে বলেছেন, কিন্তু আপনি রোজা রাখলেন না। এখানে আল্লাহ রব হিসেবে আপনাকে আদেশ দিয়েছেন, কিন্তু আপনি তাঁর আদেশ মানেননি। ফলে, আদেশ দাতা রব আল্লাহর আনুগত্য গ্রহণ করা হয়নি।

এখন ধরুন, আপনার পিতা আপনাকে বলেন, "অমুকের জমি অন্যায়ভাবে দখল করে নাও।" আপনি যদি তার আদেশ মেনে কাজ করেন, তাহলে আদেশ দেওয়ার মাধ্যমে আপনার পিতা "রব"-এর ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু যতক্ষণ আপনি তার আদেশ পালন না করেন, তিনি আপনার "ইলাহ" হবেন না। যখন আপনি তার কথামতো কাজ করবেন, তখন তিনি আপনার "ইলাহ" হয়ে যাবেন, কারণ আপনি তাকে আনুগত্য দিয়েছেন এবং তিনি সেই আনুগত্য গ্রহণ করেছেন।

দুনিয়াতে অনেকেই—বাবা-মা, ভাই-বোন, শাসক, বন্ধু, বস—রবের আসনে বসে আদেশ দিতে পারে। কিন্তু মুমিনরা কারোরই ইলাহ হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া। যদি তাদের আদেশ আল্লাহর আদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, সেটি আল্লাহর আদেশই গণ্য হবে।

এ কারণেই আল্লাহ বলেননি—
"
লা রব্বা ইল্লাল্লাহ"- আল্লাহ ছাড়া কোন রব মানি না
কেননা অনেকেই আদেশদাতা অর্থে "রব" হিসেবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। কিন্তু,আল্লাহ ছাড়া কারো আনুগত্য মেনে কাজ করা যাবে না।

আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে আমরা রবের আসনে বসাই:

১. পার্লামেন্ট সদস্য:
আইন প্রণয়নকারী পার্লামেন্ট সদস্যরা দেশের বিভিন্ন আইন ও বিধি প্রণয়ন করেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি পার্লামেন্ট এমন একটি আইন পাস করে যা ইসলামের নীতির বিপরীত, তখন যারা সেই আইন মেনে চলে, তারা আদর্শভাবে আল্লাহর আদেশের পরিবর্তে পার্লামেন্টের সিদ্ধান্তকে উচ্চমার্যাদা দেয়।

২. নেতা বা রাজনৈতিক নেতা:
রাজনৈতিক নেতারা দেশের নীতিমালা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেন যা ইসলামের বিধির বিরুদ্ধে, তার অনুসারীরা সেই সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেয়।

৩. এলাকার চেয়ারম্যান ও মেম্বার:
স্থানীয় প্রশাসনের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা এলাকার বিভিন্ন সমস্যা সমাধান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন চেয়ারম্যান স্থানীয়ভাবে কিছু অযাচিত আদেশ দেন, তার সিদ্ধান্তের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে কেউ কেউ তাকে "রব" হিসেবে মেনে নেয়।

৪. প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) বা ব্যবসার মালিক:
একটি কোম্পানির CEO বা ব্যবসার মালিক সিদ্ধান্ত নেন যে কর্মচারীরা মেনে চলতে বাধ্য। উদাহরণস্বরূপ, একটি ব্যবসার মালিক যদি এমন কিছু আদেশ দেন যা ইসলামের বিধির বিরুদ্ধে, কর্মচারীরা সেই আদেশ মেনে নিয়ে তাকে "রব" হিসেবে মেনে নেয়।

৫. শিক্ষক:
শিক্ষকেরা শিক্ষার ক্ষেত্রের নিয়ম এবং নীতি নির্ধারণ করেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন শিক্ষক ধর্মীয় বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত দেন যা ইসলামের বিধির বিরুদ্ধে, ছাত্ররা সেই সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে তাকে "রব" হিসেবে গণ্য করতে পারে।

নবী এবং আলেমদেরকে রব বানানো:

নবীরা কখনও নিজেদেরকে "রব" হিসাবে দাবি করেননি বা তাদের অনুসারীদের এমন নির্দেশ দেননি। কিন্তু কিছু মানুষের মিথ্যা প্রচারণা এবং ভুল বুঝাবুঝির কারণে, তারা নিজেদেরকে নবীর নাম ব্যবহার করে ধর্মীয় সিদ্ধান্ত ও আদেশের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ:

১. নবী ঈসা (আঃ):
খ্রিস্টানদের কিছু মতবাদ অনুযায়ী, ঈসা (আঃ) কে আল্লাহর অংশ বা প্রভু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও ঈসা (আঃ) কখনও নিজেকে রব দাবী করেননি, কিছু মানুষ মিথ্যা হাদিস এবং গুজবের মাধ্যমে তাকে "রব" হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কুরআন অনুযায়ী, ঈসা (আঃ) নিজেকে রব দাবি করেননি:
আল্লাহ বলেন, ‘ঈসা পুত্র মেরিয়াম, তুমি কি মানুষের কাছে বলেছিলে, ‘আমাকে এবং আমার মায়ের কে আল্লাহর পাশাপাশি দুইজন প্রভু (রব) হিসেবে গ্রহণ করো?’”
(
সূরা আল-মায়িদাহ ৫:১১৬)

২. আলেম বা ধর্মীয় পণ্ডিত:
কিছু ধর্মীয় পণ্ডিতরা ধর্মীয় বিধি-নিষেধ নির্ধারণে এমন মতবাদ প্রকাশ করেছেন যা কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো আলেম এমন কিছু সিদ্ধান্ত দেন যা কুরআনের নির্দেশনার বিপরীতে হয় এবং সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া হয়, তাহলে তা "রব" বানানোর মতো হতে পারে। কুরআন বলে:

اِتَّخَذُوْۤا اَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ اَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللّٰهِ وَالْمَسِيْحَ ابْنَ مَرْيَمَ ۚ وَمَاۤ اُمِرُوْۤا اِلَّا لِيَعْبُدُوْۤا اِلٰـهًا وَّاحِدًا ۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ؕ سُبْحٰنَهٗ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ

যে বিষয়ে আল্লাহ নিজেকে রব দাবি করেছে, সেবিষয়ে তারা আল্লাহর পরিবর্তে তাদের (ধর্মীয় আলেম) যাজক ও পাদ্রীদেরকে এবং মরিয়মের পুত্র ( তাদের নবী ঈসা) মসীহকে রব হিসেবে গ্রহণ করেছে।অথচ তাদেরকে একেবারেই  কোন নির্দেশ দেওয়া হয় নাই  যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে। (কেননা), আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ ( বা আনুগত্য মেনে কাজ পাওয়ার যোগ্য কেও) নাই। আল্লাহ সকল অযোগ্যতা থেকে মুক্ত, তা সত্বেও  তারা আল্লাহর সাথে অনেককে অংশীদার করে।
(আল-কুরআন, আত-তাওবাহ ৯:৩১)

নবী বা আলেমদের আদেশ এবং নির্দেশনার ক্ষেত্রে কুরআনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু মিথ্যা প্রচারণা বা ভুল ব্যাখ্যা তাদেরকে "রব" হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। তবে, মুমিনদের জন্য কুরআনের নির্দেশনা একমাত্র সত্যিকারের পথনির্দেশক এবং আল্লাহই একমাত্র আসল "রব" যিনি সঠিক নির্দেশনা প্রদান করেন। অতএব, কোনো প্রকার মিথ্যা বা ভুল ব্যাখ্যার ভিত্তিতে আল্লাহর আদেশের পরিবর্তে অন্য কারো আদেশ মেনে নেওয়া উচিত নয়।

আল্লাহ বলেন:

إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ 

"নিশ্চয়ই আমরা কুরআন নাজিল করেছি, এবং আমরাই এর সংরক্ষক।" 

— (সূরা আল-হিজর, আয়াত ৯)

এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি কুরআনের সংরক্ষণ দায়িত্ব স্বয়ং গ্রহণ করেছেন, এবং কিয়ামত পর্যন্ত কুরআন অপরিবর্তিত থাকবে।

কিন্ত,

আল্লাহ সরাসরি হাদিস সংরক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এমন কোনো আয়াত কুরআনে উল্লেখ নেই। তবে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ রাসূলুল্লাহ -এর অনুসরণ ও তাঁর কথামালার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। উদাহরণস্বরূপ, আল্লাহ বলেন:

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا
অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (এর প্র্যাকটিক্যাল জীবন যেমন যুদ্ধ, রাজনীতি, সমাজনীতি সহ সৃ্পূর্ন জীবনের) মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ, তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।

— (সূরা আল-আহযাব, আয়াত ২১)

এছাড়া, হাদিস সংরক্ষণ ও তা প্রামাণিকভাবে সংরক্ষণ ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই মুসলিম উম্মাহর সাহাবী ও তাবেঈনের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে হয়ে এসেছে। আল্লাহর ইচ্ছায় এবং মুসলিম উম্মাহর প্রচেষ্টায় হাদিস সংগ্রহ, যাচাই-বাছাই, এবং সংরক্ষণ একটি সুসংগঠিত প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে।

তা সত্ত্বেও, কিছু জাল হাদিস সমাজে বিদ্যমান।

আর, কালেমার মাধ্যমে যখন আপনি ঘোষনা দিচ্ছেন, আল্লাহ ছাড়া কারো আনুগত্য আপনি মানেন না, তাই বলা যায়, কালেমা হাদিসকে কুরআনের কষ্টিপাথরে যাচাইয়ে বাধ্য করে। নিঃসন্দেহে রাসূলের হাদিস কুরানের সাথে সাংঘর্ষিক হবে না,কিন্তু জাল হাদিস যেটি কুরানের সাথে সাংঘর্ষিক তা বর্জনীয়।

Why should this definition be removed?