Øখুশিমনে আনুগত্য মেনে যার জন্য কাজ করা হয় তাকে ইলাহ
বলে। আর, যারা শুধুমাত্র
এক আল্লাহ্র আনুগত্য খুশিমনে মেনে কাজ করে, তাদের ইলাহ শুধুমাত্র
আল্লাহ।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন- ইলাহ শব্দের অর্থ হলো "মাবুদ"। যার ইবাদত
করা হয় তাকে মাবুদ বলা হয়। অর্থাৎ, যার আনুগত্য মেনে
নিয়ে মানুষ সেই অনুসারে কাজ করে, তাকে ইলাহ বলা হয়।
চতুর্থ হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ ভাষাবিদ ও অভিধান প্রণেতা হুসাইন আহমদ ইবনু ফারিস
(মৃত্যু ৩৯৫ হিজরী) তার বিখ্যাত গ্রন্থ “মাকায়িস আল-লুগাহ” তে এই শব্দের সংজ্ঞাতে
লিখেনঃ
"হামজা, লাম ও হা= ইলাহ: ধাতুটির একটিই মূল অর্থ, তা হলো যিনি মাবূদ। আল্লাহ ইলাহ, কারন মানুষ তার ইবাদত করে।[ইবনু ফারিস, মু'জামু মাকাইসিলুগাহ ১/১২৭]
আরবি ভাষায় সব পূজিত ব্যক্তি, বস্তু বা দ্রব্যকেই 'ইলাহ' বলা হয়। [ড. খোন্দকার
আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহিমাহুল্লাহ),
কুরআন
সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা ৯৩]
তৎকালীন আরবরা যাদের কথা অনুসারে চলত, তাদেরকেই তারা 'ইলাহ' ডাকতো। আবু
জেহেল, আবু
লাহাব সহ যাদের কথায় তারা মানত, তাদেরকেও 'ইলাহ' ডাকতো।
আপনি আল্লাহর আনুগত্যের পরিবর্তে যাদের আনুগত্য করেন, তারা সকলেই 'ইলাহ' হতে পারে।
ইলাহ হতে পারে শাসক, মন, বাবা-মা, ভাই-বোন, আলেম, বন্ধু, মূর্তি, নেতা—যেকোনো কিছু।
তাই বলা হয়,
Ilah
is someone or something you obey and act in accordance with that obedience. Or,
Ilah is an authority you accept as absolute and act in accordance with that
authority.
অর্থাৎ ইলাহ হলো এমন
কেউ বা কিছু,
যার আনুগত্য আপনি মেনে চলেন এবং সেই আনুগত্য অনুযায়ী কাজ করেন।
অথবা, ইলাহ হলো এমন একটি কর্তৃত্ব, যাকে আপনি চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ করেন এবং সেই কর্তৃত্ব অনুযায়ী কাজ
করেন।
আসুন কুরআন থেকে দেখি:
اَرَءَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلٰـهَهٗ هَوٰىهُ ۙ
"তুমি কি তাকে দেখেছো যে তার মনকে ইলাহ বানিয়েছে?"
Al-Furqan 25:4
মন কিভাবে ইলাহ হয়? সহজভাবে বলতে গেলে, যদি আপনার মন বলে মদ
খাও, আর আপনি মনের আনুগত্য মেনে মদ খান, তাহলে আপনার মন আপনার ইলাহ হয়ে যায়।
যদি আপনার অফিস বস বলেন, "ওজনে কম দাও," আর আপনি সেটা
করেন, তাহলে বস আপনার ইলাহ হয়ে যান।
অন্যদিকে, যদি আপনি শাসকের আনুগত্য মেনে কাজ করেন, তাহলে শাসকও ইলাহ হয়ে যায়।ভ
وَقَالَ فِرْعَوْنُ يٰۤاَيُّهَا الْمَلَاُ مَا عَلِمْتُ لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرِيْ
"আর ফির‘আউন বলল, ‘হে পারিষদবর্গ,
আমি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ আছে বলে জানি না।’"
Al-Qasas 28:38
قَالَ لَئِنِ اتَّخَذْتَ اِلٰـهًا غَيْرِيْ لَاَجْعَلَنَّكَ مِنَ الْمَسْجُوْنِيْنَ
"ফির‘আউন বলল, ‘যদি তুমি আমাকে ছাড়া
কাউকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ কর, তাহলে আমি তোমাকে কয়েদীদের
অন্তর্ভুক্ত করব।’"
Ash-Shu'ara' 26:29
ফেরাউন নিজেকে আল্লাহ দাবি করে নাই,
এই দাবি
কেও করতেও পারে না; বরং সে নিজেকে ইলাহ দাবি করেছে যে, তার
কথামত মিশরের সবাইকে চলতে হবে।
শাসকদেরও ইলাহ থাকতে পারে। ধরুন, আমি বাংলাদেশের সরকার প্রধান। মানুষ
আমার কথা শুনে, কিন্তু
আমি আল্লাহ্র আনুগত্যের পরিপন্থি ভারত বা
আমেরিকার কথামত চলি। তাহলে আমার ইলাহ হবে ভারত বা আমেরিকা।
وَقَالَ الْمَلَاُ مِنْ قَوْمِ فِرْعَوْنَ اَتَذَرُ مُوْسٰي وَقَوْمَهٗ لِيُفْسِدُوْا فِي الْاَرْضِ وَيَذَرَكَ وَاٰلِهَتَكَ ؕ قَالَ سَنُقَتِّلُ اَبْنَآءَهُمْ وَنَسْتَحْيٖ نِسَآءَهُمْ ۚ وَاِنَّا فَوْقَهُمْ قٰهِرُوْنَ
"আর ফির‘আউনের কওমের সভাসদগণ বলল, ‘আপনি কি
মূসা ও তার কওমকে ছেড়ে দেবেন যাতে তারা যমীনে ফাসাদ করে এবং আপনাকে ও আপনার
ইলাহদেরকে বর্জন করবে?’"
Al-A'raf 7:127
এখানে দেখা যাচ্ছে,
ফির‘আউনেরও অনেক ইলাহ ছিল।
ইলাহ হতে পারে মূর্তি,
হতে পারে সূর্যও। তাই, সূর্যের আরেক নাম 'ইলাহাহ'।
এখন প্রশ্ন হলো,
মূর্তি তো জড় পদার্থ,
তা কিভাবে আনুগত্য নেয়?
আসলে, মূর্তি
আনুগত্য নিতে পারে না,
কিন্তু মানুষ মনে মনে বিশ্বাস করে যে, মূর্তিটি আনুগত্য নিচ্ছে এবং এটা ওটা
করতে বলেছে।
এই কারণে কুরআনে সরাসরি মূর্তিকে ইলাহ বলা হয়নি:
وَاِذْ قَالَ اِبْرٰهِيْمُ لِاَبِيْهِ اٰزَرَ اَتَتَّخِذُ اَصْنَامًا اٰلِهَةً
"আর (স্মরণ কর) যখন ইবরাহীম তার পিতা আযরকে বলেছিল, ‘তুমি কি
মূর্তিগুলোকে ইলাহরূপে গ্রহণ করছ?’"
Al-An'am 6:74
এটি মূলত একটি টিসকারী মূলক কথা যে,
তোমার
আচরণ দেখে মনে হচ্ছে মূর্তি তোমার আনুগত্য নিচ্ছে এবং মূর্তি তোমাকে এটি করতে
বলেছে , অথচ তা কেবল জড় পদার্থ ছাড়া আর কিছুই নয়।
ইলাহ হতে পারে এমন বিষয়সমূহ
১. মানবীয়
কর্তৃত্ব:
- শাসক: যদি কেউ শাসকের নির্দেশ পালন করতে গিয়ে আল্লাহর গাইডেন্সের বিপরীত কিছু করে, তাহলে সেই শাসক তার ইলাহ হয়ে যায়।
- অফিস বস: অফিস বসের নির্দেশে আল্লাহর নির্দেশনার
বিপরীত কিছু করলে, বসের আনুগত্যের
মাধ্যমে বস ইলাহ হয়ে যায়।
২. পারিবারিক
সদস্য:
- বাবা-মা: যদি বাবা-মা এমন কিছু করার নির্দেশ দেন যা
আল্লাহর নির্দেশনার বিপরীত, এবং কেউ তাদের
নির্দেশ অনুসরণ করে, তাহলে বাবা-মা
ইলাহ হয়ে যায়।
৩. অন্যরা:
- বউ/স্বামী: যদি জীবনসঙ্গী এমন কিছু করতে বলেন যা
আল্লাহর গাইডেন্সের বিপরীত, এবং কেউ সেই
নির্দেশ অনুসরণ করে, তাহলে
জীবনসঙ্গীও ইলাহ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
- বাচ্চা: সন্তানদের জন্যও যদি কেউ আল্লাহর নির্দেশনার
বিপরীত কিছু করে, তাহলে সন্তানের
নির্দেশনা অনুসরণও ইলাহ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
জড় পদার্থের আনুগত্যের ধারণা
জড় পদার্থ যেমন মূর্তি বা সূর্য নিজে আনুগত্য নিতে পারে না। তবে, কিছু মানুষ
যদি মনে করে যে এই জড় পদার্থ তাদের নির্দেশ দিচ্ছে, তখন তারা ওই পদার্থকে ইলাহ হিসেবে
মনে করে।
·
মূর্তি: মূর্তিগুলি
কিছু করতে পারে না, কিন্তু
যদি কেউ বিশ্বাস করে যে মূর্তি তার জন্য নির্দেশনা প্রদান করছে এবং সেই অনুযায়ী সে কাজ করে,
তাহলে সে মূর্তিকে ইলাহ হিসেবে গণ্য করছে।
·
সূর্য বা অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান: সূর্য বা অন্যান্য
প্রাকৃতিক উপাদান নিজে কিছু করতে পারে না, কিন্তু যদি কেউ মনে করে যে এগুলি তার
জন্য নির্দেশনা প্রদান করছে এবং সেই অনুযায়ী সে কাজ করে, তাহলে সে ওই
পদার্থকে ইলাহ হিসেবে গণ্য করছে।
আল্লাহ কুরআনে যে গাইডেন্স প্রদান করেছেন, তার বিপরীতে কিছু করা এবং জড়
পদার্থকে ইলাহ হিসেবে ভাবা,
এসবই ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যায়। মূল বিষয় হলো, আল্লাহর
নির্দেশনার বাইরে কিছু করলে এবং জড় পদার্থকে আনুগত্য করার বিশ্বাস করলে, তা ইলাহর
আনুগত্য হিসেবে গণ্য হয়।